৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন ২য় কর্মদিবসের উত্তর - Class 7 History and Social Science Annual Assignment 2nd day Solution 2023

Mofizur Rahman
0

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন ২য় ‍দিনের সমাধান ২০২৩ পিডিএফ - Class Seven History and Social Science Annual Assessment Working Day 2 Answer PDF

৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন ২য় কর্মদিবসের উত্তর - Class 7 History and Social Science Annual Assignment 2nd day Solution 2023

মাধ্যমি/দাখিল ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান (২য় ‍দিন)

কর্মদিবস-২ (১০ মিনিট)

  • কাজ ১:

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান (অবশিষ্ট কাজ)

ধাপ ৩: শিক্ষার্থীরা তথ্য সাজিয়ে প্রতিবেদন/ দেয়ালিকা/পুস্তিকা ইত্যাদি যেকোনো মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে জমা দিবে।

শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্ত তথ্যকে দলগতভাবে আলোচনা করে তথ্যগুলো সাজিয়ে নিবে। এরপর প্রত্যেকে একটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিবে। সেটি হতে পারে প্রতিবেদন/ দেয়ালিকা/পুস্তিকা ইত্যাদি।

উপকরণ:

  • ১. পোস্টার পেপার
  • ২. ছবি
  • ৩. খাতা
  • ৪. কালার পেন
  • ৫. পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি


প্রথম কর্ম ‍দিবসের যে ৩টি থিম এর কাজ দিয়েছিল তা তোমরা পোস্টার বা ব্যানার এর মত করে সাজিয়ে নিচের দেওয়া তথ্য গুলো সেখানে লিখবে। থিম ৩ টি হলো:

  • থিম ১: মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন
  • থিম ২: মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ভূমিকা
  • থিম ৩: মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তির অবস্থান ও ভুমিকা

আমি তোমাদেরকে ২/১ টা পোস্টার এর নমুনা কপি  নিচে দিয়ে দিব। তোমরা তা অনুসরণ করে নিজেদের পোস্টার গুলো বানিয়ে ফেলতে পারবে। এবং পোস্টারে নিচের দেওয়া থিম এর তথ্যগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে লিখবে।

৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন ২য় কর্মদিবসের উত্তর - Class 7 History and Social Science Annual Assignment 2nd day Solution 2023

৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন ২য় কর্মদিবসের উত্তর - Class 7 History and Social Science Annual Assignment 2nd day Solution 2023


থিম-১: মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন

বিষয়বস্তু: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন কেমন ছিল?

অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্নঃ

১। মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার রাজনৈতিক কারণগুলো কি ছিলো?
২। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো কেন ঐক্যবদ্ধ হয়?
৩। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ কি ছিল?
৪। স্বাধীনতা যুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের ফলে কি কি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়?


তথ্যের উৎস: পাঠ্যপুস্তক, মুক্তিযুদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, ইন্টারনেট।

তথ্য সংগ্রহঃ

মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার রাজনৈতিক কারণ:

মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার রাজনৈতিক কারণ: ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিভিন্ন ধলনের বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের স্বাধিকারের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে অস্বীকার করে। ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর অনুষ্টিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক মাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ দেননি। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২ ই মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালায়। এ গণহত্যা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা আরও প্রবল করে তোলে। ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।


মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণ:

মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণ: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের শুরু হয়। এই ঐক্যের মূলে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আকাঙ্খা। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবি এই ঐক্যের শক্তিকে আরও দৃঢ় করে তোলে। ছয় দফা দাবির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের জগনের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি উন্থাপন করেন। এই দাবি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিল।


১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ:

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ: ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মূল কারণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবির মাধ্যমে। ছয় দফা দাবির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের জন্য স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি উন্থাপন করেন। এই দাবি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিল।


ছয় দফা দাবির পাশাপাশি ১৯৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থানের আরও কিছু কারণ ছিল:

ছয় দফা দাবির পাশাপাশি ১৯৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থানের আরও কিছু কারণ ছিল তা নিচে বর্ণনা করা হলো:

  • পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও শোষণ।
  • পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য।
  • ১৯৬৮ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ।
  • এই অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বৃদ্ধি পায়।


স্বাধীনতা যুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের প্রভাব:

  • পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা বৃদ্ধি পায়।
  • পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়।
  • ভারতের সমর্থনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

তথ্য বিশ্লেষণ: উল্লেখিত উৎস থেকে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে দিয়েছে, এমন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। এগুলো বিশ্লেষণ করে নিচে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হলো:

তথ্য উপস্থাপন:


মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন

মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন গুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব যেমন ছিল, ঠিক তেমন রাজনৈতিক প্রভাবও ছিল অনেক। তৎকালীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনেক প্রেক্ষাপট জাতিকে একটি যুদ্ধের দিকে ধাবিত করে। যেভাবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি নতুন রাষ্ট্রগঠনের দিকে ধাবিত হয়েছিল, তা নিচে তুলে ধরা হলো:


মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার রাজনৈতিক কারণ:

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিভিন্ন ধলনের বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের স্বাধিকারের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে অস্বীকার করে। ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর অনুষ্টিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক মাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ দেননি। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২ শে মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালায়। এ গণহত্যা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা আরও প্রবল করে তোলে। ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।


মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণ:

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের শুরু হয়। এই ঐক্যের মূলে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আকাঙ্খা। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবি এই ঐক্যের শক্তিকে আরও দৃঢ় করে তোলে। ছয় দফা দাবির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের জগনের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি উন্থাপন করেন। এই দাবি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিল।


১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ:

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুস্থানের মূল কারণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবির মাধ্যমে। ছয় দফা দাবির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের জন্য স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি উন্থাপন করেন। এই দাবি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিল।


ছয় দফা দাবির পাশাপাশি ১৯৬৯ সালের গনঅভ্যুস্থানের আরও কিছু কারণ ছিল:

  • পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও শোষণ।
  • পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ।
  • ১৯৬৮ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
  • এই অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বৃদ্ধি পায়।


স্বাধীনতা যুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের প্রভাব:

  • পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা বৃদ্ধি পায়।
  • পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়।
  • ভারতের সমর্থনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, ১৯৪৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত-নিপীরিত জনগণ স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়।


ফলাফল বা সিদ্ধান্ত:

আমাদের জন্য স্বাধীনতা সবসময়েই জরুরি ছিল। কেননা আমরা পরাধীন ছিলাম। সাতচল্লিশের স্বাধীনতার পরও সেটা অনিবার্য হয়ে উঠেছিল একাধিক কারণে। প্রথম কারণ জাতিগত প্রশ্নের মীমাংসা। পাকিস্তান নামের এই অস্বাভাবিক রাষ্ট্রটিতে নিপীড়ন চলছিল বাঙালির জাতিসত্তার ওপরে। নিষ্ঠুর নিপীড়ন। রাষ্ট্রক্ষমতা যাদের দখলে ছিল তারা কেবল যে অবাঙালি ছিল তা নয়, ছিল তারা বাঙালি-বিদ্বেষী। শাসনব্যবস্থার পুরোটাই ছিল এই বাঙালি- বিদ্বেষীদের হাতে। সামরিক বাহিনী, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, আদালত, জেলখানা সবই তাদের অধীনে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ গোটা অর্থনীতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করত। প্রচার মাধ্যমে তারা ছাড়া আবার কারা? শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তারা হাতের মুঠোয় রাখতে চাইত। জাতিগত নিপীড়নের এই সমস্যার সমাধান না করে অন্য প্রশ্নগুলোর মীমাংসা করা সম্ভব ছিল না। সে- জন্যই স্বাধীনতা অতি জরুরি ছিল।


থিম-২: মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা

বিষয়বস্তু: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা কেমন ছিল?

অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্নঃ

১। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধাদের অবস্থান ও ভূমিকা কেমন ছিল?
২। মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও ভূমিকা কেমন ছিল?
৩। মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের অবস্থান ও ভূমিকা কেমন ছিল?
৪। মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের ভূমিকা কেমন ছিল?


তথ্যের উৎস:

পাঠ্যপুস্তক, মুক্তিযুদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, ইন্টারনেট ।

তথ্য সংগ্ৰহ ও বিশ্লেষন বা বর্ণনা:

মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধাদের অবস্থান ও ভূমিকা:

মুক্তিযুদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু করলে মুক্তিযুদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা পাকিস্তানি সেনাদের যাতায়াত বাধাগ্রস্ত করে, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়। I


মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও ভূমিকা:

রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় এবং মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত ও প্রশিক্ষণ দেয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় । তারা মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত ও প্রশিক্ষণ দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে।


মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের অবস্থান ও ভূমিকা:

শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে এবং মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে। শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে। তারা লিফলেট, প্রচারপত্র ও বক্তৃতার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অর্থ ও রসদ সংগ্রহ করেন।


মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের ভূমিকা:

মুক্তিযুদ্ধে সবাই যে দেশের হয়ে লড়াই করেছিল, তা কিন্তু না। এদেশেরই আলো-বাতাসে বড় হওয়া কতিপয় মানুষ ও সংগঠন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং হানাদার বাহিনীর হয়ে কাজ করেছিল। এরাই মূলত রাজাকার । মুক্তিযুদ্ধে এদের ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ নেতিবাচক।


তথ্য বিশ্লেষণ:

উল্লেখিত উৎস থেকে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা, এমন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। এগুলো বিশ্লেষণ করে নিচে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হলো:

তথ্য উপস্থাপন:

মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধাদের অবস্থান ও ভূমিকা:

মুক্তিযুদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু করলে মুক্তিযুদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা পাকিস্তানি সেনাদের যাতায়াত বাধাগ্রস্ত করে, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়।


মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও ভূমিকা:

রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় এবং মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত ও প্রশিক্ষণ দেয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়। তারা মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত ও প্রশিক্ষণ দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে।


মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের অবস্থান ও ভূমিকা:

শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে এবং মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে। শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে। তারা লিফলেট, প্রচারপত্র ও বক্তৃতার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অর্থ ও রসদ সংগ্রহ করেন।


মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের ভূমিকা:

মুক্তিযুদ্ধে সবাই যে দেশের হয়ে লড়াই করেছিল, তা কিন্তু না। এদেশেরই আলো-বাতাসে বড় হওয়া কতিপয় মানুষ ও সংগঠন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং হানাদার বাহিনীর হয়ে কাজ করেছিল। এরাই মূলত রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধে এদের ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ নেতিবাচক।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষ ইতিবাচক ভূমিকা যেমন রেখেছিল ঠিক তেমনি নেতিবাচক ভূমিকাও রেখেছিল।

ফলাফল বা সিদ্ধান্ত:

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষ দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। কিন্তু কিছু স্বদেশী শুত্রু তারা নিজেদের স্বার্থে পাকিস্তানিদের সাহায্য করেছে।


থিম-৩: মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা

বিষয়বস্তু: মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা কেমন ছিল?

অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্ন:

১। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক কোন কোন রাষ্ট্র অবস্থান নিয়েছিল?
২। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক কোন কোন ব্যক্তি অবস্থান নিয়েছিল?

তথ্যের উৎস:

পাঠ্যপুস্তক, মুক্তিযুদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, ইন্টারনেট।

তথ্য সংগ্রহ:

  • ভারত:

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে অনেকেই বলে থাকেন ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না থাকলে ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের দেশে আশ্রয় দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে সেনা সহায়তা দেওয়াসহ সব ধরনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তা দিয়েছিল ভারত। ভারতের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে স্পষ্টভাবে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। আর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পরই বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভুটানের পর দ্বিতীয় বিদেশি রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। উপমহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি

  • রাশিয়া:

ভারতের পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিত্রশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন।সোভিয়েতের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তার প্রতিপক্ষ আমেরিকা ও চীনকে হীনবল করা সম্ভব হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে আশ্বাস দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যুদ্ধে সম্পৃক্ত হলে তারা এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারত। দ্বিতীয়টি সোভিয়েত ইউনিয়ন।


  • ইংল্যান্ড:

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধুর ভূমিকা পালন করে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা জোরালোভাবে বাঙালির স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন জানান। শরণার্থীদের জন্য অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দেয়। একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাক্রম সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাতে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


  • ইন্দিরা গান্ধী:

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে মুক্তিযুদ্ধের ধাত্রী বলা হয়ে থাকে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান হানাদারদের পাশবিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় ১ কোটি লোক আশ্রয় নেয় ভারতে। সে সময় ইন্দিরা গান্ধী এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে দেশে ফেরত না পাঠিয়ে আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। এ ছাড়াও বিশে^র বিভিন দেশে ঘুরে বাংলাদেশের জন্য সমর্থক জুগিয়েছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করেছেন মূলত বাংলাদেশকে রক্ষার তাগিদেই। তার এই অবদান কোনো কিছুর বিনিময়ে শেষ হওয়ার নয়। তাই বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে তাকে।


জর্জ হ্যারিসন ও রবিশঙ্কর:

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত প্রায় সব বাঙালি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের নির্যাতন শুরু হলে ভারতের সেতার সম্রাট খ্যাত রবিশঙ্কর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে নিজের ভেতর তাগিদ অনুভব করলেন। ঠিক করলেন বাদ্যযন্ত্রের দ্বারা সঙ্গীতের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবেন। সে সময় তার সঙ্গে যুক্ত হলেন বিখ্যাত বিটলস ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য বন্ধু জর্জ হ্যারিসন। মহান এ দুজন ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯৭১ সালে ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে প্রায় ৪০ হাজার দর্শক নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক এক কনসার্ট। বিখ্যাত এ কনসার্টে একের পর এক গেয়েছেন বব ডিলান, লিওন রাসেল, রিঙ্গো স্টারসহ আরও অনেকে। সবশেষে জর্জ হ্যারিসন গাইলেন বিখ্যাত বাংলাদেশ গানটি। যা ইতিহাসে স্মরণীয় এক গানে পরিণত হয়েছে। রবিশঙ্কর ও হ্যারিসনের উদ্যোগে 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' নামক এই কনসার্ট হতে প্রাপ্ত প্রায় ২ কোটি ৪৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার ইউনিসেফের মাধ্যমে ভারতে আশ্রিত ১ কোটি শরণার্থীদের সাহায্য ব্যয় করা হয়।


  • সায়মন ড্রিং:

যুদ্ধে অবদান রাখা অন্যতম আরও একজন বিদেশি বন্ধু সাংবাদিক সায়মন ড্রিং। প্রথম বিদেশি সাংবাদিক যিনি প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের গণহত্যা সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করেন। কলম আর ক্যামেরার হাতে তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন এ দেশের মুক্তিকামীদের পক্ষে। যুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পরে বিদেশি সাংবাদিকদের দেশে আসার অনুমতি দেন পাকিস্তান বাহিনী। সায়মন তাদের মধ্যে অন্যতম। সে সময় তিনি পাকিস্তান হানাদারদের বর্বর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন বিশ^দরবারে। যুদ্ধের পরিস্থিতি তার বিপক্ষে গেলেও তিনি এদেশ ত্যাগ না করে গা ঢাকা দেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। ২৫ মার্চের ভয়াবহতার পর ঢাকা শহরের হত্যা, ধ্বংসের চিত্র নিয়ে চলে যান ব্যাংককে। সেখান থেকে তিনি বিশ^বাসীর সামনে মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্মম বাস্তবতাকে তুলে ধরেন 'ট্যাঙ্কস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান' প্রকাশের মাধ্যমে। তার প্রকাশিত খবরই প্রথম বিশ^বাসীকে নাড়া দেয়।


  • অ্যালেন গিন্সবার্গ

অ্যালেন গিন্সবার্গের 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' কবিতাটা সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানি আমরা। মার্কিন কবি অ্যালেন মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলেন তার এই কবিতাটির মাধ্যমে। তার এ কবিতাটি আলোড়ন জোগায় সারা বিশে^ ছড়িয়ে থাকা অগণিত সাহিত্যপ্রেমীদের মনে। তার এই কবিতার প্রতিটি লাইনে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ সময়ে বাঙালি জাতির অসহায়ত্বের চিত্র, পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র। যা এখনও আলোড়িত করে বাঙালি জাতিকে।


  • অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি:

আমৃত্যু তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু। যুদ্ধকালীন অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি কর্মরত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হিসেবে। শুরু থেকেই তিনি বাঙালি গণহত্যার বিরোধিতা করেছেন। ভারতে আশ্রয় নেওয়া ১ কোটি শরণার্থীর অমানবিকতা দেখে গিয়ে তিনি সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির কাছে ক্রাইসিস ইন সাউথ এশিয়া' নামে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। এত উঠে আসে পাকিস্তান বাহিনীর নির্মমতার বিস্তারিত চিত্র। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য বিশ^বাসীর কাছে সাহায্য আবেদন করেন। বাংলাদেশের অকৃত্রিম এই বন্ধু ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশ ভ্রমণেও আসেন।


তথ্য বিশ্লেষণ:

উল্লেখিত উৎস থেকে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা, এমন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। এগুলো বিশ্লেষণ করে নিচে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হলো:

তথ্য উপস্থাপন:

মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা

ভারত: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে অনেকেই বলে থাকেন ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না থাকলে ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের দেশে আশ্রয় দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে সেনা সহায়তা দেওয়াসহ সব ধরনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তা দিয়েছিল ভারত। ভারতের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে স্পষ্টভাবে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। আর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পরই বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভুটানের পর দ্বিতীয় বিদেশি রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। উপমহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি।


রাশিয়া: ভারতের পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিত্রশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েতের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তার প্রতিপক্ষ আমেরিকা ও চীনকে হীনবল করা সম্ভব হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে আশ্বাস দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যুদ্ধে সম্পৃক্ত হলে তারা এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারত। দ্বিতীয়টি সোভিয়েত ইউনিয়ন।

ইংল্যান্ড: মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধুর ভূমিকা পালন করে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা জোরালোভাবে বাঙালির স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন জানান। শরণার্থীদের জন্য অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দেয়। একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাক্রম সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাতে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ইন্দিরা গান্ধী: মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে মুক্তিযুদ্ধের ধাত্রী বলা হয়ে থাকে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান হানাদারদের পাশবিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় ১ কোটি লোক আশ্রয় নেয় ভারতে। সে সময় ইন্দিরা গান্ধী এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে দেশে ফেরত না পাঠিয়ে আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। এ ছাড়াও বিশে^র বিভিন দেশে ঘুরে বাংলাদেশের জন্য সমর্থক জুগিয়েছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করেছেন মূলত বাংলাদেশকে রক্ষার তাগিদেই। তার এই অবদান কোনো কিছুর বিনিময়ে শেষ হওয়ার নয়। তাই বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে তাকে।


জজ হ্যারিসন ও রাবশঙ্কর: কনসার্ট ফর বাংলাদেশ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত প্রায় সব বাঙালি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের নির্যাতন শুরু হলে ভারতের সেতার সম্রাট খ্যাত রবিশঙ্কর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে নিজের ভেতর তাগিদ অনুভব করলেন। ঠিক করলেন বাদ্যযন্ত্রের দ্বারা সঙ্গীতের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবেন। সে সময় তার সঙ্গে যুক্ত হলেন বিখ্যাত বিটলস ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য বন্ধু জর্জ হ্যারিসন। মহান এ দুজন ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯৭১ সালে ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে প্রায় ৪০ হাজার দর্শক নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক এক কনসার্ট। বিখ্যাত এ কনসার্টে একের পর এক গেয়েছেন বব ডিলান, লিওন রাসেল, রিঙ্গো স্টারসহ আরও অনেকে। সবশেষে জর্জ হ্যারিসন গাইলেন বিখ্যাত বাংলাদেশ গানটি। যা ইতিহাসে স্মরণীয় এক গানে পরিণত হয়েছে। রবিশঙ্কর ও হ্যারিসনের উদ্যোগে 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' নামক এই কনসার্ট হতে প্রাপ্ত প্রায় ২ কোটি ৪৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার ইউনিসেফের মাধ্যমে ভারতে আশ্রিত ১ কোটি শরণার্থীদের সাহায্য ব্যয় করা হয়।

সায়মন ড্রিং: যুদ্ধে অবদান রাখা অন্যতম আরও একজন বিদেশি বন্ধু সাংবাদিক সায়মন ড্রিং। প্রথম বিদেশি সাংবাদিক যিনি প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের গণহত্যা সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করেন। কলম আর ক্যামেরার হাতে তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন এ দেশের মুক্তিকামীদের পক্ষে। যুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পরে বিদেশি সাংবাদিকদের দেশে আসার অনুমতি দেন পাকিস্তান বাহিনী। সায়মন তাদের মধ্যে অন্যতম। সে সময় তিনি পাকিস্তান হানাদারদের বর্বর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন বিশ^দরবারে। যুদ্ধের পরিস্থিতি তার বিপক্ষে গেলেও তিনি এদেশ ত্যাগ না করে গা ঢাকা দেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। ২৫ মার্চের ভয়াবহতার পর ঢাকা শহরের হত্যা, ধ্বংসের চিত্র নিয়ে চলে যান ব্যাংককে। সেখান থেকে তিনি বিশ^বাসীর সামনে মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্মম বাস্তবতাকে তুলে ধরেন 'ট্যাঙ্কস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান' প্রকাশের মাধ্যমে। তার প্রকাশিত খবরই প্রথম বিশ^বাসীকে নাড়া দেয়।

অ্যালেন গিন্সবার্গ: অ্যালেন গিন্সবার্গ অ্যালেন গিন্সবার্গের 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' কবিতাটা সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানি আমরা। মার্কিন কবি অ্যালেন মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলেন তার এই কবিতাটির মাধ্যমে। তার এ কবিতাটি আলোড়ন জোগায় সারা বিশে^ ছড়িয়ে থাকা অগণিত সাহিত্যপ্রেমীদের মনে। তার এই কবিতার প্রতিটি লাইনে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ সময়ে বাঙালি জাতির অসহায়ত্বের চিত্র, পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র। যা এখনও আলোড়িত করে বাঙালি জাতিকে।

অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি: আমৃত্যু তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু। যুদ্ধকালীন অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি কর্মরত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হিসেবে। শুরু থেকেই তিনি বাঙালি গণহত্যার বিরোধিতা করেছেন। ভারতে আশ্রয় নেওয়া ১ কোটি শরণার্থীর অমানবিকতা দেখে গিয়ে তিনি সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির কাছে ক্রাইসিস ইন সাউথ এশিয়া' নামে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। এত উঠে আসে পাকিস্তান বাহিনীর নির্মমতার বিস্তারিত চিত্র। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য বিঅ্যালেন গিন্সবার্গ বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য আবেদন করেন। বাংলাদেশের অকৃত্রিম এই বন্ধু ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশ ভ্রমণেও আসেন।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক রাষ্ট্র ও ব্যক্তি ইতিবাচক ভূমিকা যেমন রেখেছিল ঠিক তেমনি নেতিবাচক ভূমিকাও রেখেছিল।

ফলাফল বা সিদ্ধান্ত: ১৯৭১ সালে বিদেশি এসব বন্ধু ও রাষ্ট্রের অবদানের কথা বলে শেষ করার নয়। তাদের উপকারের কোনো প্রতিদান হয় না। তাই বাঙালি জাতিকে আজীবন শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে যেতে হবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের। যারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে। বাঙালি জাতির চরম সঙ্কটকালে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন, সামাজিক বিজ্ঞান বার্ষিক মূল্যায়ন

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!
close