Life and literary work of Baru Chandidas - বড়ু চণ্ডীদাস এর পরিচয় ও সাহিত্য কর্ম
বড়ু চণ্ডীদাস এর পরিচয়
মধ্যযুগের প্রথম কাব্য 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' এর রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস। তিনি শ্রীচৈতন্যদেবের ১০০/১২৫ বছর পূর্বে জীবিত ছিলেন। তিনি বাসলী দেবীর আরাধনা করেই কবি প্রতিভা অর্জন করেছিলেন। দেবী বরে তিনি কবিত্বশক্তি লাভ করেন, এটি তাঁর সহজাত প্রতিভা নয় ।
প্রশ্ন: বড়ু চণ্ডীদাস কখন জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: বড়ু চণ্ডীদাস জন্মগ্রহণ করেন আনুমানিক ১৩০৯ সালে।
(বসন্তরঞ্জন রায়ের মতে) এবং ড. শহীদুল্লাহর মতে, ১৩৭০ সালে ছাতনার বাঁকুড়ায়; মতান্তরে বীরভূমের নান্নুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর প্রকৃত নাম অনন্ত। তাঁর কৌলিন্য উপাধি বড়ু। গুরু প্রদত্ত নাম চণ্ডীদাস।
প্রশ্ন: বড়ু চণ্ডীদাস কখন মৃত্যু বরণ করেন?
উত্তর: বসন্তরঞ্জন রায়ের মতে, তিনি মারা যান আনুমানিক ১৩৯৯ সালে এবং ড. শহীদুল্লাহর মতে, ১৪৩৩ সালে।
প্র. ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের রচয়িতা কে?
উত্তর: বড়ু চণ্ডীদাস।
প্র. ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য কোথা থেকে, কে উদ্ধার করেন?
উত্তর: ১৯০৯ সালে (১৩১৬ ব.) পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের নিকটবর্তী কাঁকিল্যা (কালিয়া) গ্রামের শ্রীনিবাস আচার্যের দৌহিত্র বংশীয় দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামক এক ব্রাহ্মণের বাড়ির গোয়ালঘরের মাচার ওপর থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং পুঁথিশালার অধ্যক্ষ বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ এটি উদ্ধার করেন। বসন্তরঞ্জন রায়ের উপাধি- 'বিদ্বদ্বল্লভ ।
প্র. 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের রচনাকাল কত?
উত্তর: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে, ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ। গোপাল হালদারের মতে, (১৪৫০-১৫০০ খ্রি.) এর মধ্যে।
প্র. কার সম্পাদনায় ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য প্রকাশিত হয়?
উত্তর: বসন্তরঞ্জন রায় ১৯১৬ সালে (১৩২৩ বঙ্গাব্দ) 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ' থেকে এটি প্রকাশ করেন।
প্র. ‘শ্ৰীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যে কয়টি খণ্ড ও চরিত্র আছে?
উত্তর: ১৩টি খণ্ড। চরিত্র: রাধা (জীবাত্মা বা প্রাণিকূল), কৃষ্ণ (পরমাত্মা বা ঈশ্বর), বড়ায়ি ( রাধাকৃষ্ণের প্রেমের দূতি)।
প্র. 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের অপর নাম কী?
উত্তর: শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ। 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' নামটি রাখেন বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ।
প্র. ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যে বড়ু চণ্ডীদাসের আর কী কী নাম পাওয়া যায়?
উত্তর: অনন্ত চণ্ডীদাস, চণ্ডীদাস, বড়ু চণ্ডীদাস।
পদাবলী:
সহজিয়া ভাবধারায় পদাবলীর কবি চণ্ডীদাস রচিত মানবিক প্রেমের কয়েকটি পদ —
"ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপিয়া আছয়ে যে জন, কেহ না জানয়ে তারে।
প্রেমের আরতি যে জন জানয়ে সেই সে চিনিতে পারে।।"
"মরম না জানে, মরম বাথানে, এমন আছয়ে যারা।
কাজ নাই সখি, তাদের কথায়, বাহিরে রহুন তারা।
আমার বাহির দুয়ারে কপাট লেগেছে – ভিতর দুয়ার খোলা।"
"কহে চণ্ডীদাস, কানুর পীরিতি – জাতিকুলশীল ছাড়া।"
"প্রণয় করিয়া ভাঙ্গয়ে যে। সাধন-অঙ্গ পায় না সে।"
"কি লাগিয়া ডাকরে বাঁশী আর কিবা চাও।
বাকি আছে প্রাণ আমার তাহা লৈয়া যাও। "
সহজিয়া গুরুবাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি লেখেন,
"শুনহ মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ বড়, তাহার উপরে নাই।"