মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) এর জীবনী

Mofizur Rahman
0

মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) এর জীবনী

মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) এর জীবনী

হাকীমুল উম্মত মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহি আলায়হি ছিলেন ইউসুফ যাঈ বংশীয় পাঠান। তাঁর পূর্বপুরুষদের কিছু সংখ্যক লোক খুব সম্ভব মুঘল শাসনামলে আফগানিস্তান হতে হিজরত করে হিন্দুস্তান (ভারত) চলে এসেছিলেন। 

তাঁর পিতামহ হযরত মুনাওয়ার খান (রহমাতুল্লাহি আলায়হি) উজাহানী (বদায়ূন, হিন্দুস্তান) এর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি সেখানকার পৌরসভার সম্মানিত সদস্যও ছিলেন।

পিতা জনাব মুহাম্মদ ইয়ার একজন দ্বীনদার পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন, তিনি উজাহানী (বদায়ুন) জামে মসজিদের ইমামত, খেতাবত এবং ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন সুদীর্ঘ ৪৫ বছর পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে।

মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) অলৌকিক জন্ম: 

পিতা মাওলানা মুহাম্মদ ইয়ার (রহমাতুল্লাহি আলায়হি) এর ঔরশে পরপর পাঁচটি কন্যা সন্তান জন্ম হবার পর তিনি আল্লাহ জাল্লা শানুহুর দরবারে একটি পুত্র সন্তানের জন্য দোয়া করেন শুধু তাই নয়, পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তাকে আল্লাহ্-রসূলের রাস্তায় দ্বীনের খেদমত করার জন্য 'ওয়াক্বফ' করে দেয়ার মান্নত করেছিলেন।

আল্লাহ্ পাক তাঁর এ দোয়া কবুল করে একটি পুত্র সন্তান দান করলেন । আহমদ ইয়ার খান নঈমী ১৩১২ হিজরী মোতাবেক ১৮৯৪ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের বদায়ুন জেলার উজাহানি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতার নাম মাওলানা মুহাম্মদ ইয়ার খান। তিনি উজাহানি জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন।[সুবহানাল্লাহ্! এ শিশু পুত্রের নাম রাখা হলো 'আহমদ ইয়ার'।

পিতা মান্নত অনুযায়ী পুত্রকে দ্বীনের জন্য উৎসর্গ করলেন, পুত্র দ্বীনি শিক্ষা লাভ শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করে প্রমাণ করে দিলেন যে, তিনি বাস্তবিকপক্ষেই ‘আহমদ ইয়ার' বা 'নবী প্রেমিক'  ১৩১২ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করা এ শিশুটি আল্লাহ্-রসূলের রাস্তায় 'ওয়াক্বফ হবার জন্য যথোপযুক্ত ছিলেন।

মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) এর উপাধি:

মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) এর উপাধি হলো হাকীমুল উম্মত বা (উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক)।

মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) এর উপাধিএর ছাত্রজীবন:

মুফতি সাহেবের শিক্ষা জীবনকে পাঁচ স্তরে বিভক্ত করা যায়: ১. উজাহানী, ২. বায়ূন শহর, ৩. মীনচু, 8. মুরাদাবাদ ও ৫. মীরাঠ। উজাহানীতে শ্রদ্ধেয় পিতার কাছে 'কোরআন মজীদ শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর ফার্সী ভাষার পাঠ্যবইগুলো; জীনিয়াত এবং দরসে নিজামী'র প্রাথমিক স্তরের কিতাবাদিও পিতার নিকট পড়ে নেন।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষে অতি অল্প বয়সে তিনি দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণের জন্য জন্মভূমি ত্যাগ করে বছরের পর বছর বদায়ূন ও মিতুতে 'দরসে নিজামী'র উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে থাকেন। এ সময় জনৈক বন্ধুর মাধ্যমে মুরাদাবাদের প্রসিদ্ধ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান 'জামেয়া নঈমিয়া'র প্রতিষ্ঠাতা সদরুল আফাযিল মাওলানা মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী (রহমাতুল্লাহি আলায়হি) এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে গেল।

সদরুল আফাযিল (রা.) এ অনন্য মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে সুপ্ত প্রতিভার সন্ধান পেলেন। তিনি সাথে সাথে মুফতি সাহেবের উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিয়ে তাঁকে মুরাদাবাদ রেখে দিলেন। সে সময়কালে কানপুরের আল্লামা মুশতাক আহমদ (র.) ইসলামী যুক্তিবিদ্যা ও দর্শনশাস্ত্র এবং অংক শাস্ত্রে যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী হিসেবে খ্যাত ছিলেন।

মাওলানা মুরাদাবাদী (রহমাতুল্লাহে আলায়হি) মাসিক উপযুক্ত বেতন ধার্য করে আল্লামা মুশতাক আহমদ ছাহেবকে জামেয়া নঈমীয়া মুরাদাবাদে নিয়ে আসেন। অতঃপর মুফতি সাহেবের উচ্চশিক্ষার পরম্পরা শুরু হয়ে গেলো। কিছুদিন পর আল্লামা মুশতাক ছাহেব মীরাঠ তশরীফ নিয়ে যান । তখন মুফতি ছাহেবও তাঁর একজন বিশিষ্ট সাগরেদ হিসেবে তাঁর সহগামী হলেন ।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য আযাদী আন্দোলনের একজন নাম করা সৈনিক শায়খুল কোরআন মাওলানা আবদুল গফুর হাযারডীও (র.) কানপুর মুরাদাবাদ ও মীরাঠে আল্লামা মুশকাত আহমদ ছাহেবের নিকট শিক্ষা লাভ করতে থাকেন। সে সুবাদে আল্লামা হাযারভী শায়খুত তাফসীর মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রহমাতুল্লাহে আলায়াই) এর ওস্তাদ ভাই ছিলেন।

মুফতি ছাহেব বলতেন মুরাদাবাদে অবস্থান হচ্ছে আমার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সদরুল আফাযিল মাওলানা মুহাম্মদ নঈমুদ্দিন মুরাদাবাদীর ভালোবাসা। স্নেহ কৃপাদৃষ্টি এবং কৌশলপূর্ণ ও বিজ্ঞানসম্মত প্রতিপালন আর প্রশিক্ষণ মুফতি ছাহেবের জীবনের ওপর গভীর ও চির অম্লানভাবে রেখাপাত করেছিল।

ছাত্র জীবনের দ্বিতীয় সোপান বদায়ুন শহরে অতিবাহিত হয়। সেখানে তিনি এগারো বছর বয়সে (১৩৩৫ হি./১৯১৬খ্রিস্টাব্দ) আগমন করে 'মাদরাসা-এ শামসুল উলুম'-এ ভর্তি হন। এখানে তিনি তিন বছর যাবৎ শিক্ষা গ্রহণ করেন। (১৩৩৫ হি. ১৩৩৮ হি/১৯১৬খ্রি. ১৯১৯খ্রি.)। এটা ছিল ঐ যুগসন্ধিক্ষণ যখন মাদরাসায়ে শামসুল উলুম' (বদায়ুন) এ আল্লামা ক্বাদীর বখশ বনানী শিক্ষক ছিলেন।

মুফতি ছাহেব তাঁর ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত হন। ঐ সময়কালে মুফতি আযীয আহমদ বদায়ূনীও উক্ত মাদরাসায় দরসে নিযামী'র শেষ পর্যায়ের পাঠ নিয়েছিলেন। মাদরাসার যেই কক্ষ মুফতি ছাহেব বরাদ্দ পেয়েছিলেন সেখানে আরো অনেক ছাত্র থাকতেন, তাই অধিকাংশ সময় কক্ষে শোরগোল লেগে থাকতো, যা মুফতি ছাহেবের মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে উঠেছিল।

একদিন রাত্রে এতো বেশী শোরগোল হয় যে, মুফতি ছাহেব পরবর্তী দিনের পাঠ মোটেই তৈরি করতে পারেননি। কালে আল্লামা কাদির বখশ (র.) ক্লাসে 'নাহভমীর' এর সবক পড়ানোর জন্য বসলেন। তখন পূর্ণ মনোযোগ ও একাগ্রতা সত্ত্বেও তিনি সেদিনকার সবক মোটেই বুঝতে পারেননি।

সম্মানিত উস্তাদজী সরক পড়াতে পড়াতে সামনে অগ্রসর হয়ে যাচ্ছিলেন। আর মুফতি ছাহেব সবকের প্রথমাংশও বুঝতে না পারার কারণে খুবই ইতস্ততবোধ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কেঁদে। ফেললেন। শ্রদ্ধেয় উস্তাদ এ সুরতে হাল দেখে জিগ্যেস করলেন, “আহমদ ইয়ার! এ কি ব্যাপার? নিজের কৃতকর্মের তো চিকিৎসা নেই। পূর্ব-পর্যালোচনাতো করোনি, আর এখন পাঠ বুঝারও চেষ্টা করছো?

এ কথা বলে হযরত আল্লামা কাদির বখশী সরকগুলো পড়ার জন্য ওযু সহকারে বসার শিক্ষা দিলেন। তিনি শ্রদ্ধেয় গুস্তাদের এ অন্তদৃষ্টি ও কাশফ প্রত্যক্ষ করে বিস্মিত হলেন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, আগামীতে তিনি ওষু সহকারেই শ্রেণিকক্ষে বসবেন। তিনি ওস্তাদজিকে গতরাতের সব ঘটনা খুলে বলেন, যা তাঁর পাঠ পর্যালোচনা করতে না পারার কারণ হয়ে উঠেছিল।

সাথে সাথে স্নেহময় ওস্তাদজী তার জন্য আলাদা কক্ষে অপর ভাল ছাত্র আযীয আহমদ বদায়ূনীর সাথে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। অতএব, সব দুশ্চিন্তার অবসান হলো। মেধাবী ছাত্রের সঙ্গ পেয়ে তিনি অধিকতর উপকৃত হলেন। দ্বিগুণ উৎসাহে পড়া লেখায় মনোযোগী হলেন এবং কঠোর

পরিশ্রম করে অধ্যয়ন শুরু করলেন। মুফতি আযীয আহমদ বদায়ূনীর বর্ণনা মতে, মুফতি আহমদ ইয়ার খান ছাত্র জীবনে নিয়মিত পাঠ পর্যালোচনায় খুবই অভ্যস্ত ছিলেন। অধিক রাত্রি জাগ্রত থেকে নিয়মিতভাবে পরদিনের পাঠ সম্পন্ন করতেন।

ক্লাস ছুটির পর সাথীদের নিয়ে ক্লাসে দেয়া সবক পুনঃপর্যালোচনা করতে লেগে যেতেন। কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে সাথে সাথে ওস্তাদদের নিকট থেকে বুঝে নিতেন । তাঁর উপস্থাপিত কোন বিষয়ে ভুল হলে সাথীদের নিকট এসে অকপটে স্বীকার করে নিয়ে ওস্তাদদের মতটিই ব্যক্ত করতেন।

তিনি প্রায়শ বলতেন, এমতাবস্থায় যতোক্ষণ পর্যন্ত না নিজের ভুল স্বীকার করে নিতাম ততোক্ষণ পর্যন্ত আমার মন মেজাজ স্থির হতোনা।" মাদরাসা-এ শামসুল উলুম' থেকে মাত্র তিন বছর পড়ালেখা করে তিনি কৃতিত্বের সাথে বের হয়ে আসেন। মুফতি আযীয আহমদের মতে, তিনি এ মাদরাসায় 'নুরুল আনওয়ার' এর সবক পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন।

ছাত্রজীবনের তৃতীয় পর্যায় মীতু রাজ্যে অতিবাহিত হয়। এখানে রাজ্য প্রধানের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি 'দারুল উলুম' (মাদরাসা) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । এখানকার শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে ভাল অভিমত পাওয়া যায়। মুফতি আযীয আহমদের মতে এ মাদরাসা তখন দেওবন্দী ভাবধারায় পরিচালিত হতো।

মুফতি ছাহেব এ মাদরাসায় ৩/৪ বছর পড়ালেখা করেন (১৩৩৮ হি. ১৩৪১ হি/১৯১৯ ইং ১৯২২ইং)। ফলে তিনি দেওবন্দী ভাবধারার ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ালেখার সাথে আলা হযরত ও সদরুল আফাযিলের অধিকতর জ্ঞান গভীরতার তুলনামূলক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ লাভ করেন।

স্বয়ং মুফতি ছাহেব বলেন, 'আমি দেওবন্দী ওস্তাদদের নিকট একটা বিশেষ সময়সমীমা পর্যন্ত পড়া লেখার সুযোগ পাই। এর ফলে একথা উপলব্ধি করলাম যে, শিক্ষাগত গবেষণার ব্যবস্থাটুকু তাদের নিকট আছে বটে, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে ইত্যবসরে সদরুল আফালি মুরাদাবাদী কুদ্দিসা সিররুহুর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়ে গেলে তিনি আমাকে আলা হযরতের লেখা 'আতোয়া-য়াল কাদীর ফী আহকামীত তাসভীর' নামক একটা রিসালা (পুস্তক) পাঠ-পর্যালোচনার জন্য অর্পণ করলেন।

এটা দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়লাম। এই রিসালাটা মীন্ডুতে শিক্ষা অর্জন কালীন থেকে আমার ওপর প্রভাব ফেলে এসেছে। 'মুফতি ছাহেবের পিতা মাওলানা মুহাম্মদ ইয়ার আহমদ (র.) মাযহাব ও আব্বীদার ক্ষেত্রে কট্টর সুন্নী হানাফী ছিলেন।

তাই তাঁরই পুত্র (মুফতী ছাহেব) মীতুর উক্ত মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণ করা এটা তার মনঃপুত হলোনা বার্ষিক ছুটির সময় মুফতী ছাহেব বাড়ি আসলে সকলের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পারলেন। মুফতি ছাহেবের এক চাচাতো ভাই মুরাদাবাদে চাকরি করতেন, তিনি কিছুদিন বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে মুরাদাবাদ যাবার সময় মুফতি ছাহেবকে জোর করে নিয়ে যান।

মাওলানা মুরাদাবাদীর সাথে সাক্ষাৎ করতে বলেন, মুফতী ছাহেব ভাইয়ের সাথে মুরাদাবাদ পৌঁছলেন। সদরুল আফাযিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি মুফতি ছাহেবকে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। মুফতি ছাহেব প্রতিটি প্রশ্নের সদুত্তর দিলেন। অতঃপর মুফতি ছাহেবও সদরুল আফাযিলের নিকট কয়েকটি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও যথার্থ উত্তর দিলেন । মন তৃপ্তিতে ভরে গেল।

সুতরাং একদিকে মুফতি ছাহেব (মুরাদাবাদে) তাঁর সম্পর্কে ইলম ও হিকমতের বা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমুদ্র ঢেউ খেলতে দেখতে পেলেন, অপরদিকে সদরুল আফাযিল সম্ভাবনাময় মেধাবী শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ যোগ্যতা মুফতি ছাহেবের মধ্যে প্রত্যক্ষ করলেন ।

অতঃপর সদরুল আফাযিল বললেন, “ভাই মাওলানা! জ্ঞানের সাথে জ্ঞানের মাধুর্যও যদি অনুভব করা যায়, তবেই স্থিরতা দান করা হয় এবং বক্ষ প্রশস্ততাকারী অমূল্য ধন পাওয়া যায়। মুফতি ছাহেব আরয কররেন, জ্ঞানের মাধুর্য বলতে কি বোঝায়? হযরত বললেন, জ্ঞানের মাধুর্য হুজুর আলায়হিস্ সালামের পবিত্র সত্তার সাথে সম্পর্ক কায়েম রাখলেই হাসিল হতে পারে। শব্দাবলীর মাধ্যমে বর্ণনা করা দুষ্কর।” 

এই কথোপকথনে মুফতি ছাহেবের হৃদয়ে গভীর ও অবিস্মরণীয়ভাবে রেখাপাত করেছিল। উপরিউক্ত সাক্ষাৎপর্ব শেষ হবার পর মুফতী ছাহেব 'জামেয়া নঈমিয়া' মুরাদাবাদে ভর্তি হন। সদরুল আফাযিল মুফতি ছাহেবের চাহিদানুযায়ী যুক্তি ও দর্শন শাস্ত্রের উচ্চস্তরের পাঠদান শুরু করেন। কিন্তু হযরত মুরাদাবাদীর অতি ব্যস্ততার কারণে পাঠদান অনিয়মিত হতে লাগলো।

মুফতি ছাহেব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেন, একদিন মুরাদাবাদ ত্যাগ করলেন, সদরুল আফাযিল জানতে পেরে তাকে ডেকে পাঠালেন। ফিরে আসলে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয় যে, ভবিষ্যতে পাঠদানে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি ইসলামী দর্শনের যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম অতি উচ্চ পর্যায়ের ওস্তাদ আল্লামা মুশতাক আহমদ কানপুরীর নিকট ‘জামেয়া নঈমিয়া'র অধ্যাপনার পদ অলংকৃত করতে প্রস্তাব পাঠালেন। প্রস্তাব পেয়ে আল্লামা কানপুরী তাঁর নিকট পড়ুয়া সকল ছাত্রের 'জামেয়া নঈমিয়া'য় ভর্তি ও আহার, বাসস্থান এবং অধ্যয়নের সুযোগ দেয়ার শর্তে রাজি হলেন।

সদরুল আফাযিল শর্তটি মেনে নিলে আল্লামা মুশতাক আহমদ মুরাদাবাদে তশরীফ নিয়ে আসেন । মুফতী ছাহেবের বর্ণনা মতে, আল্লামা কানপুরীর তখন মাসিক বেতন ধার্য হয়েছিল ৮০ (আশি) রুপিয়া।তখন থেকে মুফতি ছাহেবের ছাত্র জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরু হলো।

একদিকে ওস্তাদ হলেন যুগশ্রেষ্ঠ শিক্ষাদাতা ও বরেণ্য ইমাম, অন্যদিকে, ছাত্র হলেন অনন্য মেধাবী ও শিক্ষার প্রতি অদম্য উৎসাহপ্রবণ ও আগ্রহী ওস্তাদের যেমন জানা ছিল যে, ইনি হলেন এমন এক ছাত্র যাঁর জন্যই তাঁকে সুদূর কানপুর থেকে আনা হয়েছে, অন্যদিকে ছাত্রেরও একথা জানা ছিল যে, এ আল্লামা-ই যমান ওস্তাদকে বিশেষভাবে তাঁকে পড়ানোর জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

কয়েকবছর পর হযরত মুশতাক আহমদ কানপুরীর কয়েকটি অনিবার্য কারণে চূড়ান্তভাবে মীরাঠ চলে যাওয়া অপরিহার্য হয়ে উঠে। তিনি সদরুল আফালিকে একথা বলে তাঁর অনুমতি পেলেন যে, তিনি তাঁর এ প্রিয় ছাত্র আহমদ ইয়ার খানকে সাথে মীরাঠ নিয়ে যাবেন। সদরুল আফাযিলের অনুমতি পেয়ে জ্ঞানের এ অনন্য কাফেলা মুরাদাবাদ থেকে মীরাঠের উদ্দেশে যাত্র করালো।

উল্লেখ্য, কানপুর মুরাদাবাদ ও মীরাঠে শায়খুত তাফসীর আবুল হাক্বাইক আল্লামা আবদুল গফুর হাযারভীও আল্লামা মুশতাক আহমদের ছাত্র ছিলেন। মীরাঠে মুফতী ছাহেব প্রায় তিন বছর পড়ালেখা চালিয়ে যান। এটা ছিল ছাত্র জীবনের শেষ পর্যায়ে। সর্বমোট বিশ বছরে তিনি পড়ালেখা সমাপ্ত করলেন।

এ প্রসঙ্গে তাঁর চাচাতো ভাই আযীয খান এক ঐতিহাসিক পঙতি রচনার মাধ্যমে ছাত্র জীবনের শেষবর্ষে (১৩৪৪ হি./১৯২৬ইং) একটি আয়াতে করীমার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ছাত্র পর্যায়ের এ শেষ স্তরটি মুফতি ছাহেবের জীবনের উপর চিরন্তন নকশা একে দিয়েছে। ইসলামী দর্শনে দক্ষতা অর্জন করেছেন আল্লামা মুশতাক আহমদ কানপুরীর হাতে।

দ্বীনি শিক্ষার সাথে সাধনায় সম্পৃক্ততা এবং সত্য ও নিষ্কলুষ ধর্ম ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অসাধারণ ভালবাসার মতো উভয় জাহানের অমূল্য সম্পদ হযরত সদরুল আফাযিল থেকে প্রাপ্ত। হযরত সদরুল আফাযিল মুফতি ছাহেবকে কিছুটা পাঠদান করেছেন বটে, কিন্তু প্রজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টি ও মুমিন সুলত অন্তদৃষ্টি মুফতি সাহেবের সমগ্র ব্যক্তিত্বে এক সুন্দর পরিবর্তন এনে দিয়েছে মুফতি ছাহেবও এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আমার নিকট যা কিছু আছে সবই সদরুল আফাযিল দান করেছেন।

তিনি সদরুল আফাযিল মাওলানা নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদীর নামের সাথে সম্পৃক্ত করে স্বীয় নামের সাথে 'নঈমী' লিখতেন। তাঁকে হাদীস শরীফ বর্ণনা করার অনুমতি ও সনদ প্রদান করেছেন স্বয়ং সদরুল আফাযিল সাইয়্যিদ মাওলানা নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী কুদ্দিসা সিররুহ। পরবর্তীতে মুফতি ছাহেব তার ছাত্রদেরকে এ সনদই প্রদান। করতেন ।

মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) এর সাথে আ'লা হযরতের সাথে সাক্ষাৎ:

বদায়ূনে অধ্যয়নকালে মুফতি ছাহের আ'লা হযরত ফাজিলে বেরলভীর পবিত্র দরবারে হাযিরা দেয়ার জন্য বেরিলী শরীফ তরশীফ নিয়ে যান। মুফতি ছাহেব বলেন, *মাত্র ১০/১২ বছর বয়সে আমি আ'লা হযরতের দীদারের জন্য বেরিলী শরীফ হাযির হয়েছিলাম। তখন ২৭ রজব সন্নিকটবর্তী ছিল পুরোদমে। 

এ ব্যস্ততার কারণে শুধু একবার মজলিসে হাযির হবার সুযোগ হয়, যাতে আলা হযরতের দীদার বা সাক্ষাতের সৌভাগ্য নসীব হয়েছিল। সর্বোপরি আলা হযরতের প্রতি পূর্ণ ভক্তি-শ্রদ্ধাই আমার যিন্দেগীর বড় মূল্যবান মূলধন হয়ে রয়েছে ।

ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত ফাজিলে বেরলভীর পর মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রহমাতুল্লাহি আলায়হি) হলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক গৌরবোজ্জ্বল নক্ষত্র ধার লেখনী ইসলামী বিশ্বে বিশেষভাবে সমাদৃত ও পরিচিত। আ'লা হযরত এর দ্বীনি সাহিত্য কর্ম অত্যন্ত উঁচুমানের। অর্থাৎ গভীর জ্ঞান ও গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ।

তাঁর লেখনী, জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবিদের অন্তরাত্মাকে প্রভাবিত করার উদ্দেশে নিবেদিত। কারণ উচ্চ শিক্ষার মানদন্ডের নিরিখে তাঁর লেখনী গভীর চিন্তাপ্রসূত ও অতি উচ্চমার্গের। আলা হযরতের লেখা গ্রন্থাবলীর অনেকগুলো সাধারণ পাঠকদের নিকট সহজবোধ্য ছিলনা।

কিন্তু মুফতি | ছাহেবের সহজ সরল অনুবাদ ও পর্যালোচনার কারণে  আলা হযরতের লেখাসমূহ পাঠক সমাজে সহজবোধ্য হয়েছে এবং দ্বীন মিল্লাতের খেদমতে সুদূরপ্রসারী অবদান। রেখেছে। মুফতি ছাদের স্বয়ং বলেছেন, আমি যখন লিখতে বসি তখন একথা সামনে রাখি যে, আমি ছোট ছেলে মেয়ের, মহিলা এবং গ্রাম ও মরুভূমির স্বল্প শিক্ষিত লোকদেরকেই সম্বোধন করছি।

তাফসীর লিখতে বসার সময়ও এটাই উদ্দেশ্য ছিল যে, কোরআন করীমের এমনই সহজ সরল তাফসীর লেখা হোক, যার দ্বারা ক্বোরআন-ই হাকীমের কঠিন মাসআলা-মাসাইল ও সহজে বোধগম্য হয়।” তিনি তাফসীরে নঈমীর ভূমিকায় লিখেছেন, 'খুব চেষ্টা করা হলো যেন ভাষা সহজ হয় এবং কঠিন মাসআলাগুলোও বুঝা যায়" এ সরলতা ও সহজবোধ্যতা শুধু তাফসীরে নঈমীর ক্ষেত্রে নয়। 

বরং তার সকল লেখনীতেই এমন ধারা ও বর্ণনাভঙ্গী বিদ্যমান । তাফসীরে নঈমী ছাড়াও তিনি তরজমা কানযুল ঈমান' এর ওপর বিস্তারিত তাফসীর লিখেছেন যা তাফসীরে নুরুল ইরফান' নামেই খ্যাত। ইনশিরাহ-ই বোখারী' প্রকাশ 'নঈমুল বারী' মিশকাতুল মাসাবীহ'র উর্দু অনুবাদ ও বিস্তারিত ব্যাখ্য করেছেন ।

বিরাটাকার গ্রন্থ 'মিরআতুল মানাজী 'ইলমুল মীরাস' জা-আল হক' শানে হাবীবুর রহমান, 'ইসলামী যিন্দেগী' 'রহমতে খোদা ব ওসিলায়ে আউলিয়া' 'মু'আল্লিম-ই তাকুরীর' মাওয়াইয়-ই নঈমীয়া, সফরনামা-ই হিজায ও ক্বিবলাতাইন (হজ্ব ও যিয়ারত), হযরত আমীরে মু'আবিয়া পর এক নজর' ফাতাওয়া-ই নঈমীয়া' 'রসাইলে নঈমীয়া' এবং 'খোতবাত-ই নঈমীয়া' প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য কিতাবাদি তিনি রচনা করেছেন ।


মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) এর শিক্ষকতা:

জ্ঞানার্জন শেষে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাদানের মহান ব্রত পালনে আত্মনিয়োগ করেন। সদরুল আফাযিল তাঁকে 'জামেয়া নঈমীয়া ও মুরাদাবাদ-এর শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে। শিক্ষকতার দায়িত্ব অর্পণ করেন, সে সময় ধুরাজীর কাঠিওয়ারে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা-ই মিসকীনিয়াহর কর্তৃপক্ষ বহু গুণে গুণান্বিত উঁচু মানের একজন আলেম পাঠানোর জন্য সদরুল আফাযিলের দরবারে আবেদন করলেন।

শিক্ষাদান, ফাওয়া ও খোতবা প্রদানসহ যাবতীয় ধর্মীয় দায়িত্বাবলী পালনে একজন আলেম হতে হবে। এ রকম শর্ত দেয়া ছিলো। সদরুল আফাযিল স্বল্প বয়সী মুফতি ছাহেবকে ধুরাজী মাদরাসা-ই মিসকানিয়ায় পাঠালেন।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ একজন অল্প বয়সী আলেম দেখে মনে মনে প্রমাদ গুণলেন, ইনি কি সব ঠিকঠাক আঞ্জাম দিতে পারবেন, বাহ্যিকদৃষ্টিতে কমবয়স্ক হলেও মুফতি ছাহেবের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে জ্ঞানের পূর্ণতা ও গভীরতা এবং মহাজ্ঞানী সূলভ বক্তব্য উপস্থাপনা দেখে কর্তৃপক্ষ বললেন, 'সদরুল আফাযিল তো আমাদের নিকট 'বাহারুল উলুম' (জ্ঞান সমুদ্র) পাঠিয়েছেন।

সকলেই আনন্দিত ও কৃতার্থ হলেন। সেখানে কিছুকাল অতিবাহিত করার পর শিক্ষাদানের খাতিরে মুফতি ছাহেব পুনরায় জামেয়া নঈমিয়া'য় মুরাদাবাদে তাশরিফ আনেন। এখান হতে তাঁকে 'ভব্ধি শরীফ' (গুজরাত পাকিস্তান)-এর সাইয়্যেদ জামাল উদ্দিন ছাহেবের 'দারুল উলুম'-এ প্রেরণ করা হলো। এখানে মনস্থির না হওয়ায় তিনি মাতৃভূমিতেই ফিরে যাবার জন্য লাহোর আসেন।

তখনকার দিনে ছাহেবযাদা সাইয়্যেদ আহমদ শাহ্ ছাহেব (পীর বেলায়ত শাহ'র পুত্র) 'হিসবুল আহনাফ' লাহোরে শিক্ষার্জন করছিলেন। তিনি সাইয়্যেদ আবুল বকরত ছাহেবের মাধ্যমে মুফতি ছাহেবের খেদমতে আবেদন জানালেন তিনি যেন মাতৃভুমিতে ফিরে না গিয়ে আনজুমানে খোদ্দামুস্ সুফিয়্যাহ্'র 'দারুল উলুম' এ পাঠদানের মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কারণ, সেখানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন আলেমে দ্বীনের প্রয়োজন ছিল।

গুজরাতবাসীর সৌভাগ্য যে, মুফতী ছাহেব সম্মতি প্রদান করেন। অতঃপর গুজরাত ও মুফতি ছাহেব একাকার হয়ে গেলেন । সেখানে তিনি ১২/১৩ বছর শিক্ষকতা করেন। গুজরাতেই তিনি 'মসজিদে গাউসিয়া' (চক পাকিস্তান)-এ নিয়মিতভাবে বছর পর বছর কোরআন মজীদের শিক্ষা দিতে থাকেন। দীর্ঘ ১৯/২০ বছরে প্রথমবারের মতো গোটা কোরআন মজীদের শিক্ষা দেয়া হলো, অতঃপর দ্বিতীয়বার আরম্ভ করা হলো।

তাঁরই প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম গাউসিয়া নঈমীয়া' ও দীর্ঘকাল যাবৎ গুজরাতে 'ইলমে দ্বীন'-এর আলো ছড়াতে থাকে।

বলাবাহুল্য, তিনি ঐসব লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, শরীয়ত যাঁদের স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে, নামায, ক্বোরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ এবং হজ্ব ও প্রিয় নবীর যিয়ারতের প্রতি তাঁর অসাধারণ আগ্রহ ছিল। মোটকথা, তাঁর মতো অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেমে দ্বীন ইসলামের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক।


মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (র:) এর লিখিত কিতাব তথা বই সমূহ:

তিনি পবিত্র আল কোরআনের ব্যাখ্যাসহ অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হল:
  • নুরুল ইরফান (পবিত্র আল কোরআনের ব্যাখ্যা)।
  • তাফসীরে নঈমী।
  • নাঈমুল বারী ফী ইনশিরাহ আল বুখারী।
  • 'মিরাত শরাহ মিশকাত মিশকাতুল-মাসাবিহ (৮ খণ্ড, উর্দুতে মিশকাত শরীফের ভাষ্য)।
  • রিসালা-এ-নুর।
  • জা'আল হক (দুই খণ্ড)।
  • সালতানাতে মুস্তাফা (দ.) দার মামলিকাতে কিবরিয়া।
  • ইলমুল কোরআন।

মৃত্যু:

এ মহামনিষী ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক, ইসলামী বিশ্বের এক অনন্য দিকপাল, বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন ১৩৯১ হিজরীর ৩ রমযান (২৪ অক্টোবর ১৯৭১) কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর মহান আল্লাহর দীদারে চলে যান ।

তাঁর ইন্তেকালে বিশ্ব হারালো এক অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ও লেখককে কিন্তু তাঁর জ্যোতিস্মান প্রদীপ মুসলিম বিশ্বে আলো ছড়াতে থাকবে প্রতি বছর, ২৪ ও ২৫ অক্টোবর মাযার শরীফে (মুফতি আহমদ ইয়ার খান রোড, চক গুজরাত, পাকিস্তান) ভাবগম্ভীর পরিবেশে পুর্ণ ভক্তিসহকারে পবিত্র ওরশ মুবারক সম্পন্ন হয়। করুণাময় আল্লাহ্ আমাদের এ মহান হাস্তির ফয়ূজাত নসীব করুন । আমিন । আল্লাহ্ তার দরজা বুলন্দ করুন।
Tags

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!
close