রসুল-ই আকরাম-এর শানে বেয়াদবী'র দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ইতিহাসে প্রসিদ্ধ
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান।
ইতিহাস সাক্ষী আছে যে, যখনই দ্বীন ইসলামের শত্রুরা নবী ও রাসূলগণকে কষ্ট দিয়েছে, তাঁদের প্রতি ঠাট্টা-মশাক করেছে, মিথ্যারোপ করেছে, তাঁদের মধ্যে দোষ-ত্রুটি তালাশ করেছে, তাঁদের উপর নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করেছে এবং তাদের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শন করেছে কিংবা তাঁদের মানহানি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে তখনই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাদেরকে (দ্বীন ও মিল্লাতের শত্রুগণ) তাঁর কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতে গ্রেফতার করে নিয়েছেন, নানা ধরনের বালা-মুসীবতের চাকির নিচে নিষ্পেষণ করেছেন।
এমনকি পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে তাদের নাম-নিশানা পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন কাউকে যমীনে ধ্বসিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের জন্য শিক্ষাগ্রহণের উপাদান করে ছেড়েছেন। কাউকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরে জাহান্নামে পৌঁছিয়েছেন, কারো চেহারা শুয়র/ বানরের চেহারায় পরিবর্তিত করে অতি লাঞ্ছিত করে মেরেছেন; বাকীরা দুনিয়াবাসীদের সামনে ঘৃণ্য ও মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামী এবং ফাঁসী-কাষ্ঠে ঝুলানোর দাবীর মুখে পালিয়ে বেড়ায় এমন লোকদের মতো অসহনীয় কষ্টের সম্মুখীন হয়েছে।
এ সবের প্রমাণের জন্য পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীস সমূহ মওজুদ রয়েছে। অভিশপ্ত আবূ লাহাব থেকে আরম্ভ করে কুখ্যাত দাউদ হায়দার, সালমান রুশদী, তাসলীমা নাসরীন এবং সাম্প্রতিক কালের ভারতের মালউন নুপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালের দৃষ্টান্ত তো সবার সামনে থাকছেই ।
উদাহরণের জন্য, পবিত্র কোরআনের বিংশততম পারার 'সূরা আনকাবূত' দেখুন। আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ ফরমায়েছেন-'কারন, হামান ও ফিরআউনকে আমি ধ্বংস করেছি। আর হযরত মূসা (আলায়হিস্ সালাম) তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এলে তারা রাজ্যে অহংকারী হয়ে গিয়েছিলো। তারা তো আমার আয়ত্ব থেকে বের হতে পারতো না, অতঃপর তাদের প্রত্যেককে তার অনাহর উপর পাকড়াও করেছি আল আয়াত ।
ঊনবিংশতম পারার 'সূরা আল-হাক্বক্বা'য় আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেছেন, সামূদ ও আদ গোত্রের লোকেরা ক্বিয়ামতকে অস্বীকার করেছিলো। অতঃপর সামূদকে একদিন মহানদ দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে। আর ‘আদ গোত্রকে এক প্রবল বায়ু প্রবাহ দ্বারা ধ্বংসের অতল গহবরে নিক্ষেপ করা হয়েছে । এভাবে পবিত্র ক্বোরআনে আল্লাহ্ রসূলের প্রতি বেয়াদবী ও ধ্বংসের এমন এমন ঘটনাবলীর উল্লেখ রয়েছে, যেগুলো পড়লে গা শিয়রে উঠবে ।
আরো লক্ষণীয় যে, পূর্ববর্তী নবীগণ (আলায়হিমুস্ সালাম)-এর উম্মতগুলোর বেয়াদবদের যখন এমন শোচনীয় অবস্থা হয়েছে, তখন নবীকুল সরদার হাবীব ই কিবরিয়া হযরত আহমদ মুজতাবা, মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শানে কিংবা তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণ প্রমুখের শানে কোন ধরনের, সামান্য থেকে সামান্যতম গোস্তাখী বা অবমাননাকে তিনি মোটেই বরদাশত করেননি এবং করবেনও না।
একথা আজ সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত । একারণেই আসমান ও যমীনের মহান স্রষ্টা মুসলমানদেরকে আল্লাহর রসূলের পবিত্র দরবারের আদব ও সম্মান শিক্ষা দিয়ে এরশাদ করেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বরকে নবীর আওয়াজের উপর উঁচু করো না। তোমরা তোমাদের আওয়াজকে তাঁর দরবারে ওইভাবে উঁচু করো না, যেভাবে তোমরা পরস্পরের সাথে কথোপকথনের সময় উঁচু করে থাকো। এমনটি করলে তোমাদের সমস্ত আমল বরবাদ ও বিনষ্ট করে ফেলা হবে। অথচ তোমাদের তা অনুভূতও হবে না। [সূরা হুজুরাত]
উল্লেখ্য, কাফিরদের তো কোন গ্রহণযোগ্য আমল নেই । সুতরাং তাদের পোস্তাবীর শাস্তি দ্বিগুণ, চতুর্গুণ হওয়াই অনিবার্য ।
আল্লাহ্! আল্লাহ্! এ কেমন আদব ও সম্মান রসূল-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মহান দরবারের। একজন ঈমানের সশরীর পায়কর, আশেকে রসূল কাব্যাকারে বলেছেন
ادب کا بیست زیر آسمان از عرش نازک تر
نفس گم کرده می آید جنید و بایزید ایں جا
অর্থ: আসামনের নিচে আদব ও সম্মান প্রদর্শনের এমন এক উঁচু পর্যায়ের ও শ্রেষ্ঠ স্থান রয়েছে, যা আরশের চেয়েও নাজুক তথা স্পর্শকাতর। মা ও শুমা (আমরা তোমরা) তো দূরের কথা, হযরত জুনায়দ বাগদাদী ও হযরত বায়বীদ বোস্তামীর মতো বেলায়ত সমুদ্রের ডুবুরী ও কারামত ময়দানের অশ্বারোহী এবং শরীয়ত ও ত্বরীকৃতের 'মাজমাউল বাহরাঈন' ('সমুদ্রের মলন-স্থল) ও এই স্থানে পৌঁছলে উঁচু আওয়াজে কথোপকথন তো অনেক দূরের কথা, শ্বাস-প্রশ্বাসকেও যেন রুখে রাখতেন।
কারণ, তাঁরা সেখানে সশব্দে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণকেও শালিনতার পরিপন্থী মনে করেন পেশওয়া-ই আহলে সুন্নাত, মা হিয়ে শির্ক ও বিদ'আত' আব্বা-ই নি'মাত, আলা হযরত, মুজাদ্দিদে নি'মাত-ইমা-বিয়াহ্ ও মুআইয়্যিদে মিল্লাতে তাহিরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুও দরবার-ই নুয়তের সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে লিখেছেন:-
حرم کی زمیں اور قدم رکھ کے چلنا
ارے سر کا موقع ہے او جانے والے
অর্থ: ওহে হেরম ভূমির দিকে যাত্রাকারী মনে রেখো- সেটা (হেরম ভূমি) তাতে কদম সামলিয়ে চলাফেরা করবে, কারণ সেটাতো কদম দ্বারা চলার জায়গা নয়, বরং মাথাকে কদম বানিয়ে চলার মতো পরম সম্মানিত স্থান । এতদ্সত্ত্বেও যেসব হতভাগা রসূল-ই আকরাম, নবী-ই দু'জাহান সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শানে বেয়াদবী বা অবমাননা প্রদর্শন করার দুঃসাহস দেখায় তাদের সম্পর্কে কি বলা যাবে? তাদের সম্পর্কে সংক্ষেপে এতটুকু বলে ক্রোধান্বিত মনকে প্রবোধ দেওয়া ছাড়া উপায়ও কি? কথিত আছে
خدا جب دین لینا ہے تو عقلیں چھین لیتا ہے
অর্থাৎ- "আল্লাহ্ তা'আলা যখন কাউকে তাঁর দ্বীন (ধর্ম) থেকে বঞ্চিত করতে চান, তখন তার বিবেককে ছিনিয়ে নেন ।" যেসব বদনসীব (হতভাগা) ও মর্মূদ (চিরধিক্কৃত) ইসলামের মহান নবীর সাথে বেদয়াদবী করার দুঃসহস দেখিয়েছে এবং তজ্জন্য আল্লাহ্ তা'আলার কঠিন শাস্তির সম্মুখীন ও উপযোগী হয়েছে, তাদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করতে গেলেও এক বিরাট পুস্তক হয়ে যাবে, তাই এ নিবন্ধে শুধু তিনটি ঘটনা উল্লেখ করা হচ্ছে।
ওই গুলোর দিকে গভীরভাবে লক্ষ করলে একদিকে আশিকু-ই রসূল মু'মিনদের মন আরো পশান্তি লাভ করবে, অন্যদিকে হয়তো যাদের নসীবে ঈমান ও হিদায়ত রয়েছে তারা হিদায়তপ্রাপ্ত হবে, নুতবা গোস্তাখানে রসূল-এর পোড়া মুখটি আরো থুবড়ে পড়বে ঘটনাগুলো নিম্নরূপ:
✔[এক]
পরবর্তী যুগের দাউদ হায়দার, সালমান রুশদী, তাসলিমা নাসরীন, নুপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালের চেয়ে জঘন্যতর কাফির আবূ লাহাবের ঘটনা সবাই কমবেশী জানেন। একবার হুযূর সরকার-ই দু'আলম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দ্বীন-এর দাওয়াত দেওয়ার জন্য সাফা পর্বতের উপর আরোহন করে মক্কাবাসীদের আহ্বান করলেন । তাঁর আহ্বান শুনে মক্কাবাসীগণ নির্দ্বিধায় সেদিকে দৌড়ে আসলো।
তাঁর চতুর্পাশে যখন তারা সমবেত হলো । তখন হুযূর-ই আকরাম উপস্থিত সবাইকে সম্বোধন করে এরশাদ করলেন, "যদি আমি বলি, এ পাহাড়ের ঘাটিতে শত্রুদের এক বিরাট বাহিনী আত্মগোপন করে আছে, তারা অতি সত্ত্বর তোমাদের উপর হামলা করে। বসবে, তাহলে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? সবাই একবাক্যে বলে উঠলো, "আপনি আমীন, সত্যবাদী।” আপনি কখনো মিথ্যা বলেননি। আমরা আমাদের চাক্ষুষ ঘটনাকে অবিশ্বাস করতে পারি, কিন্তু আপনার মুখে উচ্চারিত কথাকে কখনো অবিশ্বাস করতে পারি না।"
এরপর হুযূর-ই আকরাম এরশাদ করলেন,
إني لكم نذير بين يدي عذاب شديد
(অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে তদপেক্ষাও কঠিন শাস্তির খবর দিচ্ছি, যা তোমাদের মাথার উপর অপেক্ষমান)। যদি তোমরা মঙ্গল চাও, তবে কুফর ও শির্ক থেকে তাওবা করে ইসলামের গণ্ডির ভিতর এসে যাও। সেখানে তোমাদের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ও শান্তি রয়েছে । নবী-ই আকরামের এ নূরানী বক্তব্য শুনে আবূ লাহাবের চেহারা রাগে লাল হয়ে গেছে । সে ক্রোধের আগুনে জ্বলছিলো আর বললো, “তুমি ধ্বংস হও! তুমি কি আমাদেরকে একথা শুনানোর জন্য সমবেত করেছো?"
আবূ লাহাবের এ কথা শেষ হতেই সিদরাতুল মুস্তাহায় আসীন হযরত জিবরাঈল আমীন আলায়হিস সালাম ক্বহর ও গযব ভর্তি বাণী (আয়াত) হুযূর-ই আকরামকে শুনিয়ে দিলেন:-
بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ
مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ
سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ
وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ
فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِّن مَّسَدٍ
বাংলা উচ্চারণ:
তাব্বাত ইয়াদ~আবি লাহাবিও ওয়া তাব্ব।
মা~আগনা-'আনহু মা-লুহু ওয়ামা-কাসাব্।
সাইয়াছলা-না-রান যা-তা লাহাবিও।
ওয়ামরাআতুহু; হাম্মা-লাতাল হাত্বাব।
ফী জ্বীদিহা-হ্বাবলুম মিম মাসাদ্।
বাংলা অনুবাদঃ ১
ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হস্তদ্বয় এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।
তার ধন-সম্পদ আর সে যা অর্জন করেছে তা তার কোন কাজে আসল না।
অচিরেই সে শিখা বিশিষ্ট জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে,
আর তার স্ত্রীও- যে কাঠবহনকারিণী (যে কাঁটার সাহায্যে নবী-কে কষ্ট দিত এবং একজনের কথা অন্যজনকে ব’লে পারস্পরিক বিবাদের আগুন জ্বালাত)।
আর (দুনিয়াতে তার বহনকৃত কাঠ-খড়ির পরিবর্তে জাহান্নামে) তার গলায় শক্ত পাকানো রশি বাঁধা থাকবে।
বাংলা অনুবাদঃ ২
ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দু'হাত এবং সে ধ্বংস হয়েই গেছে। (আযাব থেকে বাঁচার জন্য) না তার ধন-সম্পদ কাজে আসবে, না তার স্ত্রী, যে কাঠের বোঝা মাথায় বহন করে ঘুরে ফিরে আসে। উভয়কে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।
আল্লাহ্! আল্লাহ্! খোদা তা'আলার প্রিয়তম রসূল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শানে সামান্যতম গোস্তাৰীও বরদাশত করা হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে মহান বিশ্ব প্রতিপালক আবু লাহাবের দুনিয়া ও আখিরাতের জঘন্য পরিণতির ফয়সালা শুনিয়ে দিয়েছেন। এর ফলশ্রুতি এ হলো যে, বদরের যুদ্ধের আট দিন পর ওই গোস্তাখ-ই রসূলের সারা শরীর ফোঁড়ায় ভরে গেলো। আর সেগুলোর অসহনীয় ব্যাথার চোটে যবাইকৃত মোরগের মতো আছাড়া খেতে খেতে মরলো আর জাহান্নামে পৌঁছে গেলো।
✔[দুই]
রসূল-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর শানে আরেক হতভাগা গোস্তাব আবুল আস মা মুকাররামায় থাকতো। এ খবীস (নাপাক) যখনই হুযূর-ই পুরনূর শাফি'ই ইয়াউমিন নুশুর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখতো, তখন মুখ বাঁকা করে ঠাট্টা-মাযাকের বাগ নিক্ষেপ করতো।
একদিন হুযুর তাজদার-ই রিসালাত সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওই ধিক্কৃতের এমন বেয়াদবীপূর্ণ কর্মকাণ্ড দেখে খুবই মর্মাহত হলেন। হুযুর-ই আকরাম নারায হয়ে বলে ফেললেন, (কুন কাজালিকা) (অর্থাৎ তুমি তেমনি হয়ে যাও!) হুযূর-ই আকরাম সেকথা বলার সাথে সাথে আবুল আসের মুখমণ্ডল বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। মৃত্যু পর্যন্ত তার মুখমণ্ডল বাকাই থেকে গিয়ে ছিলো।
✔[তিন]
এক খ্রিস্টান মুসলমান হয়ে রসূল-ই আকরামের দরবারে এমন নৈকট্য অর্জন করে নিয়েছিলো যে, সে ওহী লিখকের পদ পর্যন্ত পেয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ তার মাথার উপর হতাভাগ্যের এমন ভূত সাওয়ার হয়ে গেলো যে, সে রসূল ই আকরাম সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য করতে লাগলো। সে বলতে লাগলো, “মুহাম্মদ (মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট তো এতটুকু জ্ঞান T
(ইল্ম) রয়েছে, যতুটুকু আমি লিখে দিই তদপেক্ষা বেশী জ্ঞান তার কোথায়?” সুতরাং সে মুরতাদ (ইসলাম ত্যাগী ) হয়ে বের হয়ে গেলো ।
এমতাবস্থায় কিছুদিন পর ওই মরদের মৃত্যু হলো। তারপর যখন খ্রিস্টানগণ তাকে দাফন করলো, তখন মাটি ওই হতভাগার লাশটাকে গ্রহণই করলো না, বরং বাইরে নিক্ষেপ করলো । খ্রিস্টানগণ যখন তার লাশকে কবরের বাইরে নিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখতে পেলো, তখন তাদের মধ্যে এ সন্দেহ জাগলো যে, হয়তো সাহাবীগণ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম) তার লাশকে কবর থেকে বাইরে নিক্ষেপ করেছেন।
একারণে খ্রিস্টানগণ পুনরায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তার লাশটিকে দাফন করে দিলো। কিন্তু আবারও তার লাশ কবর থেকে বের হয়ে উপরে এসে গেলো । তখন খ্রিস্টানদের নিকটও একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, এটা কোন মানুষের কাজ নয়, বরং মহামহিম প্রতিপালকের কঠিন ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। সুতরাং তারা লাশটিকে বাইরে ফেলে রেখেই নিজ নিজ ঘরে চলে গেলো; তাকে পুনরায় দাফন করতে রাজি হলো না।
উপরিউক্ত ঘটনাগুলো থেকে রসূল-ই আকরামের শানে অশালীন উক্তিকারী ও ওলীগণের শানে মানহানকারীদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ, যারা তাদের মুখে, লেখনীগুলোর মাধ্যমে নবী, ওলী, সিদ্দীক, নেক্কার বুযুর্গগণ ও শহীদগণের শানে বেয়াদবী প্রদর্শন করে আল্লাহর বহর ও গযবের উপযোগী হচ্ছে । মোটকথা, আল্লাহ্র ফয়সালা হচ্ছে
والذين يؤدون رسول الله لهم عذاب أليم -
তরজমা: এবং যারা আল্লাহ্র রসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি[সূরা তাওবা আয়াত-৬১] সুতরাং যেসব গোস্তাখে রসূল আগে থেকে কাফির, যেমন নুপুর শর্মা, ও নবীন কুমার জিন্দাল, সালমান রুশদী প্রমুখ, তারা তো কাফির হিসেবে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে যাবে, আর যারা নামধারী মুসলমান হয়ে রসূলে আকরামের শানে গোস্তাখী করার দুঃসাহস দেখায়, যেমন তাসলীমা নাসরীন প্রমুখ তারা এ অপকর্ম সম্পাদনের সাথে সাথে কাফির হয়ে অনুরূপ শাস্তি (জাহান্নাম)-এর উপযোগী হয়ে যায়।
দুনিয়ায়ও তাদের লাঞ্ছনা ভোগ জগদ্বাবাসীগণ দেখেছে ও দেখতে থাকবে। আবূ লাহাব, আমর উবনুল আস ও ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা প্রমুখ দুনিয়াতেই নবী-ই আকরামের শানে গোস্তাখীর শাস্তি ভোগ করতে করতে জাহান্নামে পৌঁছেছে। দুনিয়াবাসী সালমান রুশদীর ভীত সন্ত্রস্থ অবস্থায় বন্দীসম জীবন-যাপনের দুর্দশার কথা জানতে পেরেছে, তাসলীমা নাসরীন প্রাণের ভয়ে স্বদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে বিদেশের মাটিতে আতঙ্কিত যাযাবরের ন্যায় দিনাতিপাত করছে।
যখনই লোক সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করতে চায়, তখন জুতাপেটা খেয়ে লাঞ্ছনার মৃত্যুর প্রহর গুনে । সাম্প্রতিক কালের রাসূলের শানে দু'গোস্তাখ নুপুর শর্মা ও এন. কে. জিন্দালেরও এমন পরিণতিও দুনিয়াবাসী দেখতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পদ-পদবী হারিয়েছে। ভারত-সরকার বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদেক্ষপ না নিলেও তাদের শেষ রক্ষা হবে কি না তা'তো দেখাই যাচ্ছে। পুলিশ নাকি নুপুরের পায়ে নুপুরের পরিবর্তে বেড়ী পরানোর জন্য হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছে।