অনুচ্ছেদ রচনা বাংলা-২য় পত্র - জে.এস.সি, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি | Paragraph and Composition in Bangla
গুরুত্বপূর্ণ সব অনুচ্ছেদ একসাথে পিডিএফ আকারে দেওয়া হলো:-
জে.এস.সি পরীক্ষার জন্য
এস.এস.সি পরীক্ষার জন্য
এইচ.এস.সি পরীক্ষার জন্য

বাংলা ২য় -পত্র অনুচ্ছেদ রচনা
শীতের সকাল (Winter Morning)
প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্যভেঙ্গায় আনন্দ উপাদানের কোনো কমতি নেই। ঘর থেকে দু পা ফেলে বাইরে দৃষ্টি মেললেই চোখে পড়ে নিসর্গের অমৃত লহরি। তার মধ্যে শীতের সকাল অন্যতম। বাংলাদেশের ঋতুচক্রে শীত আসে রূপ ও রসের ডালি সাজিয়ে । শীতের মোহনীয় নৈসর্গিক রূপ ধরা পড়ে শিশির স্নাত সকাল বেলায়। কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে চারপাশ। সূর্যিমামা মুখ লুকায় লজ্জায়, অভিমানে। ধীরে ধীরে মুখ বাড়িয়ে হাসে সোনালি সূর্য। ঘাসের ডগায় পড়ে থাকা শিশির বিন্দুতে রোদের আলো পড়ে মুক্তোর মতো চকচক করে। শীতের সকালে গ্রামে শুরু হয় পিঠা উৎসব। হিম শীতল ঠান্ডায় ভাপা, দুধপুলি, দুধচিতই, পাটিসাপটা প্রভৃতি পিঠা রসনায় আনে তৃপ্তির আবাদ। চাদর মুড়ি দিয়ে রোদে বসে পিঠা খাওয়ার সে কী তৃপ্তি। অন্যদিকে গৃহহীন, বস্ত্রহীন মানুষ খোঁজে একটু আশ্রয়, প্রশান্তির উষ্ণ চাদর। দরিদ্র ছেলেমেয়েরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রোদের আদরের ভরসায়। রাত জাগে সকালের প্রত্যাশায়, সকাল জাগে সূর্যের স্পর্শ কামনায়। সবকিছু মিলিয়ে শীতের সকাল আমার প্রিয় মুহূর্ত যা অপূর্ব নৈসর্গিক উপাদানে ভাময় ।
বিশ্বায়ন (Globalization)
ইংরেজি 'গ্লোবালাইজেশন' এর বাংলা পরিভাষা বিশ্বায়ন। বিশ্বব্যাপী মানুষের রাজনীতিক, আর্থনীতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রযুক্তিগত নৈকট্য ও অভিজ্ঞতার ধারাকে বলা যায় বিশ্বায়ন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নতির ফলে পৃথিবী ছোট হয়ে এসেছে। ফলে বিশ্বগ্রাম, বিশ্ব নাগরিকত্ব, মুক্ত বাজার, মুক্ত সংস্কৃতি ইত্যাদি শব্দগুলো সবার মনেই প্রভাব ফেলছে। সবাই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। আর এভাবেই ধর্ম-বর্ণ-পেশা-লিকা-দেশ নির্বিশেষে বিশ্বের মানুষের একে অন্যের খুব কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন হচ্ছে বিশ্বকে একক বাজারে পরিণত করে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। উন্নত দেশগুলো তাদের অলস পুঞ্জি অনুন্নত দেশগুলোতে বিনিয়োগের ফলে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় কিছুটা সমতা তৈরি হবে। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ ও জাতি তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। তবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবে উন্নত দেশগুলো কিছুটা ফায়দা লুটবেই, আশার কথা সেক্ষেত্রেও সতর্ক হতে শুরু করেছে অনেক দেশ। শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির বিনিময়ের মাধ্যমে অবশ্যই লাভবান হবে অনুন্নত দেশগুলো। কিন্তু কিছু কিছু দেশীয় প্রযুক্তির ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারপরও বাংলাদেশ গার্মেন্টসসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করে নিজস্ব অর্থনীতি মজবুত করছে। আর নিজস্ব রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিল্পের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশ্বায়নকে গ্রহণ করছে প্রকৃত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অংশীদার হিসেবে।
পরিবেশ দূষণ (Environment Pollution)
সমিলেনিয়াম স্কলাস্টিক ভূল এন্ড কলেজ, বগুড়া, ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজ, কুমিল্লা; বগুড়া জিলা স্কুল; কুমিল্লা জিলা স্কুল, রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আমরা যে পরিবেশে বাস করি তা প্রতিমুহূর্তে দূষিত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কলকারখানা ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। এগুলো বেশি পরিমাণে বিষাক্ত বাষ্প ও কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপাদন করে, বায়ু দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি আমরা যে ভূমিতে বিচরণ করি তাও ময়লা আবর্জনায় দুখিত। শিল্পবর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়। বন-জঙ্গল ও গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে আর এভাবে পারিপার্শ্বিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। মোটরযান, উড়োজাহাজ, গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি ইত্যাদি থেকে শব্দ হয়। এগুলো শব্দদূষণ ঘটায় যা অন্যান্য দূষণ থেকে কম ক্ষতিকর নয়। আমরা দূষণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত না হতে পারলেও এটি ব্যাপক অংশে কমাতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদেরকে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমি মনে করি, দূষণ কমাতে বিভিন্ন ধরনের দূষণ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। বেশি পরিমাণে বৃক্ষরোপণ বায়ু দূষণ কমানোর পূর্বশর্ত এবং কার্যকর পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালিও রক্ষণাবেক্ষণ পানিদূষণ অনেকাংশে কমাতে পারে। সর্বাগ্রে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত এবং এবং রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি থেকে সৃষ্ট শব্দ সহিষ্ণু মাত্রায় রাখা উচিত। সর্বোপরি প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বাজায় রেখে দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে।
যানজট (Traffic Jam)
বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে প্রতিদিন যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা হলো যানজট। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা যানজটের শহর হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত সব সময়ই যানজট থাকে। দুটি সিটি কর্পোরেশনে বিভক্ত এ মহানগরীর লোকসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। বাস, ট্রাক, কার, অটো-রিকশা ইত্যাদি মিলিয়ে কয়েক লাখ যান চলাচল করে প্রতিদিন। এসব যানের সুশৃঙ্খলভাবে চলার জন্য প্রশস্ত রাস্তা এখানে খুব বেশি নেই। বাইক আর রিকশার দাপটে সাধারণ মানুষ ফুটপাতেও ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। এর ওপর রাস্তার দুপাশে পার্ক করা হয় কার, অটো বা রিকশা। এছাড়া থাকে ছোট ছোট দোকানপাট, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালি-রড-সিমেন্ট ইট-পাথর ইত্যাদি। আবার সারা বছরই বিভিন্ন সংস্থা ইচ্ছেমতো রাস্তা কাটাকাটি করে। এসব কারণে যানজট অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। দুর্ভোগের শিকার হয় রোগী, ছাত্র-ছাত্রী, অফিসগামী মানুষ। নির্দিষ্ট সময়ের ২-৩ ঘন্টা আগে রওনা হয়েও সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা যায় না। ইতোমধ্যে যানজট নিরসনের জন্য সরকার উড়াল সেতু, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, নতুন রাস্তা বা লিংকরোড, মেট্রোরেল ইত্যাদি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হলে যানজট অনেকখানি নিরসন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করেন।
বই পড়া (Reading Books)
সামনুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা; পাবনা জেলা স্কুল; নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়: বিএএফ শাহীন কলেজ, শমশেরনগর) বই পড়া শ্রেষ্ঠ শখ। উৎকৃষ্ট বই মানুষকে প্রকৃত আনন্দ ও সুখ দান করে। বইয়ের মাধ্যমে আমরা সব কালের সব দেশের মহৎ মানুষের সংস্পর্শ লাভ করি। অতীত ঐতিহ্য, নানা চিন্তার অনুশীলন ও বিচিত্র ভাবধারার সাথে আমরা পরিচিত হই। বিচিত্র ধরনের বইয়ের মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে চেনে, নিজেকে জানে, বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করে। সেসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মানুষ ব্যক্তিজীবন তথা সমাজ ও জাতীয় জীবনকে উন্নত করে, সমৃদ্ধ করে। আমাদের মনের দিগন্ত উন্মোচিত ও প্রসারিত হয়, উদার ও মহৎ হয়। যাবতীয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে আমরা বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীল হতে পারি কেবল ভালো বইয়ের সংস্পর্শে এসে। এ কারণে পড়ার জন্য ভালো বই আনন্দদায়ক বই, অধিক বই আমাদেরকে বেছে নিতে হবে। একসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের বই সংগ্রহ একার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তাই আমাদের পাঠাগারে যেতে হবে। না থাকলে সমবেত প্রচেস্টায় পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। তাতে যেমন সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন, বিজ্ঞানের বই থাকবে, তেমনি থাকবে ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, রাজনীতি, নৃতত্ত্ব ও প্রত্নতত্ত্বের বই। বিশেষ করে আমাদের দেশ, জাতি ও সত্তাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বই অবশ্যই আমাদেরকে পড়তে হবে। বই পড়লে আমাদের মনে জাগ্রত হবে মানবিক চেতনা, দেশপ্রেম, মহৎ জীবন-ভাবনা, সত্য-সুন্দরের সাধনা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি, সময়ানুশীলন ও অধ্যবসায়ের সুদৃঢ় মানসিকতা, যা সুন্দর জীবন গঠনে, সমাজ গঠনে ও দেশ গঠনে উজ্জীবিত করবে। বই আমাদেরকে শোকে সান্ত্বনা, দুঃখ দুঃখজয়ের ব্রত ও পরাজয়ে বা ব্যর্থতায় সহিঞ্চুতার দীক্ষা দেয়। নির্মল আনন্দ লাভের জন্য বইয়ের বিকল্প নেই। তাই তো ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন- When we buy a book we buy pleasure.
সত্যবাদিতা (truthfulness)
সব কালে সব দেশে সত্যবাদিতা নন্দিত ও প্রশংসিত। সত্যবাদিতা সত্যের শক্তিতে বলীয়ান। এ শক্তি মানুষকে সৎ, নির্লোভ, ত্যাগী জীবনের দিকে পরিচালিত করে। আর মিথ্যা মানুষকে লোভ-লালসা, ভোগ ও স্বার্থপরতায় নিমজ্জিত করে। সত্যবাদী মানুষকে কোনো মূল্যেই কেনা যায় না। ন্যায়, সত্য ও সুন্দরের পূজারি সত্যবাদী সব সময়ই নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান। সে ব্যক্তিত্ববান, নিরপেক্ষ, কর্মবাদী ও পরোপকারী। সে কোনো হুমকি, জবরদস্তি, ভয়-ভীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও সত্য কথা বলতে কিছুমাত্র দ্বিধা করে না। নিজের জন্য যেমন, তেমনি অন্যের কল্যাণেও নিজের অর্থ, শ্রম, মেধা ব্যয় করতে কিছুমাত্র ভাবে না। অথচ আমাদের চারপাশের সমাজজীবনে মিথ্যাচার এমনভাবে ঘিরে ধরেছে যে মনে হয় সত্যবাদিতার আদর্শ ও মহিমা যেন মুহূর্তেই হ্রাস পেয়ে যাবে। অবশ্য মাঝে মাঝে মিথ্যাচার জয়ী হলেও তা নিতান্ত সাময়িক। কেননা সত্যের মহিমায় সত্যবাদিতা চিরকালই ছিল, চিরকালই থাকবে। অবশ্য মানুষ মূলত সৎ ও সত্যবাদী। পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে পড়ে হয়তো মিথ্যাচারকে প্রশ্রয় দেয়, কিন্তু তা সব সময়ের জন্য নয়। মহৎ ও বরণীয় যাঁরা, তাঁরা সবাই ছিলেন সত্যবাদী। সত্যবাদিতাকেই তাঁরা সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। কারণ ব্যক্তি, সমাজ তথা জাতীয় কল্যাণ, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সত্যবাদিতার বিকল্প নেই।
নারী শিক্ষা (Female Education)
বিশ্বের প্রতিটি শিশু মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে চোখ খুলে দেখতে পায় মা ও মাতৃভূমির প্রতিকৃতি। বড় হয় মা ও মাটির স্নেহে। প্রথম শিক্ষাগ্রহণ করে। মায়ের কাছ থেকে। শিক্ষিত মা মানেই শিক্ষিত সন্তান। শিক্ষিত সন্তান মানে উন্নত নাগরিক, উন্নত জাতি। তাই একটি জাতির শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে বড় হয়ে ওঠার প্রথম শর্ত শিক্ষিত মায়ের আঁচলে থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা। তাছাড়া নারী ও পুরুষ মানব সমাজের ভারসাম্য ও স্থিতির সমরূপ নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই সমাজ-সভ্যতার ক্রমবিকাশ। ফলে নারীকে পুরুষের সমান শিক্ষার সুযোগ না দিলে সে পিছিয়ে পড়বে। সভ্যতা বিকাশের গতি অনেকটা মন্থর হয়ে পড়বে। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কর্মের ক্ষেত্রে নারীর আসন কার্যকর করা প্রয়োজন এবং তার পূর্বশর্ত নারী শিক্ষা। উচ্চশিক্ষার ফলে নারী আজ সমাজের উন্নয়নে অর্থনীতি, রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আজ নারীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। নারী শিক্ষার প্রসার আজ সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অত্যাবশক। নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেয়া উচিত, সেগুলো হলো-
১. নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
২. প্রয়োজনীয় স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা যাকে শুধু নারী/ মেয়েরা পড়ালেখা করতে পারে,
৩. নারী নির্যাতন বন্ধ করা,
৪. মেয়েদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবার জন্য পৃথক পরিবহন,
৫. বয়স্ক নারীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা,
৬. শিক্ষাব্যবস্থা অবৈতনিক ও বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা
৭. শিক্ষাগ্রহশে নারীদের উৎসাহ দান করা,
৮. উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা।
সবশেষে বলা যায়, "বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।" একথা মনে রেখে, আমাদের স্বাধীন দেশে নারীকে শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে হবে। তবেই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা (Street Accident)
সড়ক মহাসড়ক এখন দুর্ঘটনার আকর আর যান্ত্রিক যানগুলো ঘাতক-দৈত্য। আমরা কেউ জানি না জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে মুম্ব দেহে ফিরে আসতে পারব কি-না। কেননা অহরহ দুর্ঘটনার বলি হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কেউ আহত হচ্ছে, কেউ জীবনের তরে পঙ্গু হচ্ছে, আবার কেউ হারাচ্ছে অকালে তার মূল্যবান জীবন। একটা জীবন হারিয়ে পরিবারের অনেক মানুষ মারাত্মক দুর্দশার শিকার হচ্ছে, অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পথে বসছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা। খাওয়া-পরা জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছে এসব পরিবারের সদস্যরা। অথচ এসব দুর্ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, কিন্তু কোনো বিচার হচ্ছে না। এমনকি গাড়ির মালিকের পক্ষ থেকে বা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে না কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। ফলে অধিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দূর্ঘটনা কবলিতের পরিবার-পরিজন। প্রতি বছর বাংলাদেশে অন্তত দশ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে আর এসব দুর্ঘটনায় অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আহত হয় কমপক্ষে দশ হাজার মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতি হয় প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। অনুন্নত সড়ক, অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থা নানামুখী দুর্নীতি, জনগণের অসচেতনতা এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য সড়কগুলোর উন্নয়ন, বাইপাস সড়ক নির্মাণ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, চালকদের প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন, দুর্নীতিরোধ, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধকরণ, আইন যুগোপযোগীকরণ ও গণসচেতনতা সৃষ্টি অত্যাবশ্যক ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (Liberation War)
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য একটি অনিবার্য বিষয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে এদেশের নিরীহ ঘুমন্ত মানুষের ওপর অতর্কিত আক্রমণ শুরু করলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতার এ ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, যুবকসহ নানা পেশার মানুষের সাথে বাঙালি সেনা, ইপিআর, পুলিশ, আনসারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এদেশের সর্বস্তরের মানুষ নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের অত্যাচার-নির্যাতন, নির্বিচার হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণসহ নানাভাবে ভারত আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ সচেতন মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে হানাদারদের বিভিন্ন সেক্টরে হত্যা ও পরাজিত করতে থাকে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয়ে পালাতে থাকে ঢাকার দিকে। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৯৩ হাজার সেনা যৌথবাহিনীর কাছে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয় এবং আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্যকভাবে জানা অবশ্য কর্তব্য।
বিজয় দিবস (Victory Day)
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এক মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশের মানুষ হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে তাই এ দিনটি 'বিজয় দিবস' হিসেবে পালিত হয়। বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা এই দিনটি পেয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের দেশের সাহসী ছেলেরা স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের শহিদ। আমরা তাঁদের সাহসী যুদ্ধ এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের জন্য গর্বিত। বিজয় দিবস একটি জাতীয় দিবস এবং প্রতিবছর আমরা এদিনটি সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করি। সচরাচর আমি এই দিনটি ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করি । আমি শহিদদের বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করি। দেশের জন্য ভালো কিছু করতে শহিদদের স্মৃতি আমাকে সবসময় উৎসাহিত করে। তাঁদের আত্মত্যাগ মাতৃভূমির মর্যাদা রক্ষার কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এই মহান বিজয় দিবস অন্যায় অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রতীক।
বাংলা নববর্ষ (Pahela Boishak)
বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। পয়লা বৈশাখ এ উৎসব পালিত হয়। পৃথিবীর যেখানে যত বাঙালি আছে, তারা সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ পালন করে। বাংলাদেশে একসময় এ দিনে 'পুণ্যাহ' অনুষ্ঠান হতো জাঁকজমকভাবে। এখন হালখাতা, মঞ্চাল শোভাযাত্রা, কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, বৈশাখী মেলা, আবৃত্তি-নাচ-গানে মুখরিত থাকে সারাদেশ। কোনো কোনো এলাকায় নৌকাবাইচ, হাকুড়, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই ইত্যাদি খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পালন করে তিন দিনব্যাপী আনন্দময় 'বৈসাবি' উৎসব। পণ্ডিতরা মনে করেন মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করেন। এ দিনটা যেমন আনন্দ * উল্লাসের জন্য তেমনি পরস্পর কুশল বিনিময় ও কল্যাণ কামনার জন্য। আমরা একে অন্যকে বলি, শুভ নববর্ষ। এ দিনে শহরাঞ্চলে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার চল হয়েছে ইদানীং। নতুন অথবা সুন্দর জামাকাপড় পরে সব বয়সের মানুষ বাংলা নববর্ষে আনন্দে মেতে ওঠে। বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব।
বিদ্যালয়ের শেষ দিন (Last Day in School)
'বিদ্যালয়ের শেষ দিন' কথাটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কেননা বিদ্যালয়ের সাথে জড়িয়ে থাকে কৈশোরের আবেগ, ভালোবাসা, ভালোলাগা, দুঃখ কষ্টের নানা অম্ল-মধুর স্মৃতি। সেসব স্মৃতি বিদায়ের দিনে খুব কষ্ট দেয়, বেদনার্ত করে, অশ্রু ঝরায়, আবেগ-আপ্লুত করে। মনে পড়ে বিদ্যালয়ের প্রথম দিনের কথা। সেদিন মনে ছিল অজানা ভয়, প্রশ্ন, কত টেনশন। কিন্তু হেডস্যারের মিষ্টি কথা, মধুর ব্যবহার সব ভুলিয়ে দিয়েছে। মনে মনে সেদিনই এই স্কুলটাকে আপন করে নিয়েছি। প্রথম দিনের ক্লাসে নতুন ড্রেস, নতুন ব্যাগ ভর্তি বই-খাতা-কলমসহ এসে নতুন বন্ধুদের সাথে খুব ভালো লেগেছিল। স্যারেরাও সবার পরিচয় জেনে বাবার মতো আদর করে অনেক উপদেশ দিয়েছিলেন। এক এক করে উপরের ক্লাসে উঠে গেছি আর সবকিছু নতুন মনে হয়েছে। স্যারদের গল্পের মতো করে পাঠদান, পরীক্ষাগুলোতে কঠোরতা, খেলাধুলা-পিকনিকে বন্ধুর মতো মজা করার কথা খুব মনে পড়ছে। দু-চারদিন মারও খেয়েছি, কিন্তু তা কখনো ব্যথাহত করেনি। তা মনে হয়েছে খুবই দরকারি। ফলে রেজাল্ট ভালো হয়েছে, পুরষ্কৃত হয়েছি প্রতি বছর। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি, রবীন্দ্র-নজরুলগীতি গাওয়া, নাটকে অভিনয় করা, বিতর্কে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে স্যারদের উৎসাহ আর প্রশিক্ষণের কথা কোনোদিনই ভুলব না। এদিনে স্যারেরাও নানা স্মৃতির কথা তুলে ধরেছেন, উপদেশ দিয়েছেন, যুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেছেন আমাদেরকে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষ, সবুজ ঘাসভরা মাঠ, চারদিকের গাছপালা আমাদের স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে। এসব ছেড়ে চলে যাওয়া বড়ই কঠিন। তবু ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রয়োজনে যেতে হবে। বিদ্যালয়ের সব স্মৃতি জেগে থাকবে আমাদের মনে চিরদিন।
ইন্টারনেট (Internet)
কারি বালিকা বিদ্যালয়, কুমিল্লা, ধানমণ্ডি শত গার্লস হাই স্কুল, ঢাকা, পড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সবচেয়ে বিস্ময়কর মাধ্যম। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এটি একটি প্রযুক্তিনির্ভর তথ্যবহুল মাধ্যম। বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট একটি বহুল আলোচিত গতিশীল মাধ্যম। এটি একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক কার্যক্রম (যোগাযোগ) সম্পর্ক স্থাপন কার্যক্রম)। এটা কম্পিউটারের সাহায্যে পরিচালিত হয়। ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে চোখের পলকে সারা বিশ্বের সংবাদ ও মতামত আমাদের নিকট এসে পৌঁছে। ইন্টারনেটের সংবাদ পরিক্রমা বিধান সংবলিত নির্দেশাবলির মাধ্যমে আমরা খুব সহজে ও দ্রুত বিশ্বের যেকোনো দেশের সংবাদপত্রসমূহ পড়তে পারি। টেলিনেট সফটওয়্যার আমাদের দেশ-বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয় সজনদের সঙ্গে কথা বলতে সাহায্য করে । ফাইল আদানপ্রদান সংক্রান্ত নির্দেশাবলি থাকার কারণে আমরা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ফাইল আদান প্রদান করতে পারি। ইন্টারনেটে গল্প করা সংক্রান্ত নির্দেশাবলি থাকায় আমরা যে কোন স্থানে বসে আমাদের প্রিয়জনদের সাথে গল্প করতে পারি। অতএব, আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি কাজগুলো থেকে শুরু করে ব্যবসায়-বাণিজ্য, ব্যাংক, বিমা, অফিসের কাজকর্ম, গবেষণা, প্রযুক্তি ও শিক্ষা সংক্রান্ত প্রায় সকল কাজই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমাধা করতে পারি। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলাই ইতোমধ্যে ইন্টারনেট কর্মসূচির আওতায় এসে গেছে। ইন্টারনেট উন্নত জীবন ও বিশ্ব ব্যবস্থাপনার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অদূর ভবিষ্যতে ইন্টারনেটের সুবিধা বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের নিকট পৌছবে এবং মানষের জীবন আরও সুখময় ও সমৃদ্ধ হবে।
পল্লি উন্নয়ন (Rural Development)
সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামল বাংলাদেশের প্রাণ পল্লি। কৃষিনির্ভর এদেশের মানুষের জীবনে প্রাচুর্য এবং স্বাচ্ছন্দ্য এনেছে পরিগ্রাম। এক সময় ফসলের বৈচিত্র্য ও প্রাচুর্যপূর্ণ উৎপাদন ও সমৃদ্ধির উৎস ছিল পরি। দেশের কৃষি উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পরি এখন আর নেই। অথচ জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পল্লি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। তাই আজকের দিনে পরি উন্নয়নের চিন্তা-চেতনা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও গতিশীল করার প্রয়াস চলছে। কারণ আমরা জানি যে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য শহরকেন্দ্রিক যে জীবনধারা তার পেছনে পল্লির অশেষ অবদান। জীবনধারণের প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য পরিতেই উৎপন্ন হয়। এভাবে 'পল্লি' দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে যুগ যুগ ধরে আমাদের জীবনের আনন্দধারাকে অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু জীবিকা উপার্জন ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে শহরগুলো গড়ে ওঠায় পরি নানাভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। পল্লিকে এভাবে শ্রীহীন ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। পল্লির উন্নয়নের জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে তৎপর হতে হবে। দেশের খাদ্যঘাটতির যে জটিল সমস্যা তা পল্লির কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। পল্লি বা গ্রামের উন্নয়ন ছাড়া জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। তাই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে গ্রাম উন্নয়নের সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়ে পল্লির মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন করতে হবে। পল্লিতে যে বিপুল জনগণ বসবাস করে তাদেরকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। শিক্ষা স্বাস্থ্যে পেশায় সংস্কৃতিতে গ্রামের জীবনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। তাহলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
শিশুশ্রম (Child Labour)
শিশুশ্রম একটি সামাজিক ব্যাধি। আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, সম্পদের অসম বণ্টন, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে ফুলের মতো কোমল নিষ্পাপ শিশুদের কচি কচি হাতগুলো শ্রমের হাতিয়ার হয়ে উঠতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের সুপ্ত প্রতিভা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। ছোটখাটো কল-কারখানা থেকে শুরু করে পাথর ভাঙা, ফেরি করা, ভিক্ষাবৃত্তি করা, বাসা-বাড়িতে কাজ করা, গার্মেন্টস, গ্যারেজ, দোকানপাট, হোটেল রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য যেসব কাজ ঝুঁকিপূর্ণ সেসব কাজে অবলীলায় শিশুদের নিয়োগ করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (জাইএলও) এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত মানুষকে যেকোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক অগে নিয়োগকে শিশুশ্রম বলে উল্লেখ করে তা নিষিদ্ধ করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করে জাতীয় শিশুনীতি। ঘোষণা করলেও এদেশে শিশুশ্রম ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কারণ শিশুদের অপরিণত দেহ ও কচি মন প্রদানে নিষ্পেষিত হতে থাকে এবং দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্লান্তির ভারে এরা অকালে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। তাই এই অমানবিক কাজ বন্ধের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক প্রণীত শিশু ও নারী নির্যাতন আইন প্রয়োগে আরও কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। শিশুশ্রম রোধকরে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এবং শিশুশ্রম ও নির্যাতন রোধে নতুন আইন প্রণয়ন ও সেই আইনের সুবিধা যাতে প্রমপীড়িত শিশুরা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আজকের শিশুই আগামী দিনের দেশ ও জাতির কর্ণধার। তাদের ওপরে নির্ভর করছে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি। তাই আমাদের সকলের উচিত হবে শিশুদের জন্য কল্যাণকর পরিবেশ নিশ্চিত করা।
মোৱাইল ব্যাংকিং (Mobile Banking)
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দিক থেকে যে দেশ যত এগিয়ে সে দেশ তত উন্নত। বাংলাদেশেও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আধুনিক রাষ্ট্রের পথে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে শুরু হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে এমন, একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যার মাধ্যে ইলেকট্রনিকের সাহায্যে স্বল্প খরচে অতি দ্রুত আর্থিক সেবা ব্যাংকিং সুবিধাবন্ধিত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০৯ সালে ১টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর অনুমতি দেয়। সর্বপ্রথম ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে। এটি মূলত অনলাইন সেবা। যেখানেই মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকবে সেখানেই এ সেবা পাওয়া যাবে। এ সেবার আওতায় কেউ অ্যাকাউন্ট খুললেই দেশের যেকোনো স্থান থেকেই ব্যাংকিং সুবিধাগুলো পাবে। এর জন্য অনুমোদিত ব্যাংকের অধীনে নির্ধারিত স্থান থেকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পর গ্রাহকের মোবাইল নম্বরের শেষে একটি 'চেক ডিজিট' যুক্ত করে ঐ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নম্বর সরবরাহ করা হয়। টাকা জমা ও তোলার সময় এ হিসাব নম্বরটি প্রয়োজন হয়। কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই গ্রাহকগণ তাদের গোপন পিন কোড ব্যবহার করে মোবাইলে টাকা লেনদেন করতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিং প্রচলিত শাখা ব্যাংকিংয়ের এমন একটি বিকল্প ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে কম খরচে দ্রুততার সঙ্গে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় আর্থিক সেবা পৌঁছে যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ পৃথিবীকে করেছে গতিশীল আর সেই গতিময়তার ছোঁয়া বাংলাদেশে এসে লেগেছে। যার দরুন উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক পথ এগোনো সম্ভব হয়েছে। আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে মোবাইল ব্যাংকিং অন্যতম ভূমিকা রাখবে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের জীবনযাত্রায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারবে এ প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
একুশে পদক (Ekushey Padak)
জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তিবিশেষ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে কয়েক ধরনের পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এসব পুরস্কারের মধ্যে একুশে পদক' পুরস্কার অন্যতম। এ পদকটির ডিজাইন করেছেন নিতুন কুণ্ডু। একুশে পদক' বাংলাদেশের একটি জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। এটি ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারীদের স্মৃতির উদ্দেশে সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ১৯৭৬ সালে প্রথম এ পুরস্কার চালু করা হয়। জাতীয় জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার 'একুশে পদক' প্রদান করে থাকে। এ পুরস্কারের জন্য বিশেষ ক্ষেত্রগুলো হলো সাহিত্য, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনীতি ও দারিদ্র্যবিমোচন, শিল্প ও সংস্কৃতি, সংগীত, নৃত্য, চারুকলা, নাট্যাভিনয়, ভাস্কর্য এবং ভাষা আন্দোলনে অবদান । প্রতিটি পুরস্কারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১৮ ক্যারেট মানের তিন ভরি ওজনের স্বর্ণপদক, সম্মাননা সনদ ও নগদ অর্থ। শুরুতে পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ ছিল পঁচিশ হাজার টাকা। পরবর্তী সমনে এ অর্থের পরিমাণ চল্লিশ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। বর্তমানে এটি এক লক্ষ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল। পর্যন্ত ৪০৩ জন গুণী ব্যক্তি এবং ৩টি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পাদক' প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া সরকার ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী আবুল বরকত, রফিক উদ্দিন আহমদ, আবদুস সালাম ও আবদুল জব্বার- এ চার জন শহিদকে ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।
খাদ্যে ভেজাল (Food adulteration)
খাদ্য খেয়ে মানুষ বেঁচে থাকে। ঘাঁটি খাবার খেয়ে মানুষ সুস্থ থাকে। মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নির্ভেজাল খাদ্যের বিকল্প নেই। কিন্তু এই নির্ভেজাল খাদ্যসামগ্রী পাওয়াই এখন কঠিন। কারণ এমন কোনো খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যাবে না যাতে কোনো ভেজাল নেই। অধিক মুনাফার জন্য এক শ্রেণির মানুষের লোভ এখন এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তা নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য। মানুষের মানবিক স্বভাব বদলে গেছে, তার চরিত্রের গুণগুলো লোপ পেতে চলেছে। নেতিবাচক চিন্তা-চেতনা তাকে অহরহ লোভের দিকে, অর্থ-সম্পদ লাভের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হয়ে উঠেছে হিংস পশু। তাই সে অন্যের ক্ষতি করতে, অন্যের জীবননাশ করতে, অন্যকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে কোনো পরোয়া করে না। তার লক্ষ্য মানুষের জীবন নয়- তার লক্ষ্য প্রভূত অর্থ-সম্পদ অর্জন, বিলাসী জীবন-যাপনের মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করা। এ কারণে দ্রব্যের ওজন বৃদ্ধি করে লাভবান। হওয়ার জন্য খাঁটি খাদ্যে কাঁকর-বালি ইত্যাদি মেশায়, তাজা রাখার জন্য মেশায় ফরমালিন, গুঁড়ো দুধে মেশায় মেলামাইন। জীবন রক্ষাকারী ওষুধে মেশায় ট্যালকম পাউডার, আটা-ময়দা ও নিম্ন মানের উপাদান। ঘিয়ের সঙ্গে পশুর চর্বি, নারকেল তেলের সঙ্গে বাদাম তেল, সরিষায় সঙ্গে শিয়াল কাঁটার বীজ, চা-পাতার সঙ্গে কাঠের গুঁড়ো, মরিচ ও হলুদের গুঁড়ার সঙ্গে রত্নক পদার্থ, কোমল পানীয়ের সঙ্গে বিষাক্ত কার্বোজি মিথাইল সেলুলোজ। এসব রাসায়নিক মেশানোর ফলে সুস্থ মানুষ পেটের পীড়া, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগ, ক্যান্সার, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হচ্ছে। ধীরগতিতে এসব রাসায়নিক দ্রব্য লিভার, কিডনি, হার্ট এমনকি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও হ্রাস করে অকেজো করে দেয়। এ ক্ষেত্রে শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ভেজাল রোধে কঠোর আইন করা হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত করা হয়েছে, নানামুখী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও লোভী মুনাফাখোর মানুষের ভেজাল তৎপরতা কমছে না। এর জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সামাজিকভাবে ভেজাল জিনিস বয়কট করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই।
সামাজিক মূল্যবোধ (Social values)
মানবজীবনকে যথার্থ সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে তার নৈতিক মূলবোধ । নীতি আদর্শ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্থার অভিব্যক্তিই নৈতিক মূল্যবোধ । নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশ লাভ করে। সমাজে কল্যাণকর কাজ ও মানবিক বোধের চর্চার মধ্য দিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ সুদৃঢ় হয়। নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের ব্যক্তিজীবনকে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তির আদর্শ সমাজে সবার জন্য অনুসরণীয় হয়। ফলে সমাজ হয়ে ওঠে ক্রমশ কলুরমুক্ত এবং বসবাসের আদর্শ স্থান। সত্যকে সত্য বলে চিনতে পারা, মিথ্যাকে মিথ্যা বলে ঘৃণা করা নৈতিক মূল্যবোধের ফল। সমাজদেহ থেকে অন্যায়, অবিচার, হিংসা-বিদ্বেষ, কলুষতা দূর করে মানবীয় সমাজ গঠনে তৎপর হওয়া মানবিকবোধসম্পন্ন মানুষের কর্তব্য। আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নানা রকম দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটায় নৈতিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। অন্যায়ভাবে, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা চলছে সমাজে। সামাজিক মূল্যবোধ আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সীমাহীন দুর্নীতি সংক্রামক ব্যাধির মতো সমাজে ছড়িয়ে পড়ে সমাজদেহকে অর্থরিত করে ফেলেছে। জাতির বৃহৎ স্বার্থে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ আমাদের অবশ্য কর্তব্য। জাতির কল্যাণে জাতীয় জীবন থেকে এই অবক্ষয় দূর করতে হবে। সমাজের সব স্তর থেকে সকল প্রকার দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হবে। নীতিবোধসম্পন্ন সুদক্ষ প্রশাসন গঠন, জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি, সংস্কৃতিকে রক্ষা ও চর্চা প্রভৃতির মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করতে হবে। তাই আমাদের সুস্থ সুন্দর জীবন-মানের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা, আইনগত অধিকার নিশ্চিত, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও মানবিকতার বিকাশ এখন একান্ত অপরিহার্য।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর (Liberation War Museum)
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙালি জাতির কাছে স্বর্ণময় এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তা জানানোর জন্য সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচায় প্রতিষ্ঠার করা হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য, প্রমাণ, বস্তুগত নিদর্শন, রেকর্ডপত্র ও স্মারক চিহ্নসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের সুব্যবস্থা আছে এখানে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রবেশপথের মুখেই রয়েছে 'শিখা চির অম্লান' । তারকা আকৃতির একটি বেদির উপর জ্বলছে শিখা অনির্বাণ। দোতলাবিশিষ্ট ঘরের মধ্যে রয়েছে ছয়টি গ্যালারি। নিচতলায় তিনটি ও উপরতলায় তিনটি। প্রথম গ্যালারির নিদর্শনগুলো দুটি পর্বে বিন্যস্ত। প্রথম পর্বে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। দ্বিতীয় পর্বে প্রদর্শিত হয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগ্রামের চিত্র। দ্বিতীয় গ্যালারিতে তুলে ধরা হয়েছে পাকিস্তান আমলের ইতিহাস। তৃতীয় গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ২৫শে মার্চ রাতের সংঘটিত গণহত্যা, স্বাধীনতার ঘোষণা, প্রাথমিক প্রতিরোধ, শরণার্থীদের জীবনচিত্র। দোতলার তিনটি গ্যালারি সাজানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য, প্রমাণ ও চিত্র দিয়ে। প্রতিটি গ্যালারিতে আছেন একজন চৌকস গাইড। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংগৃহীত স্মারকসংখ্যা প্রায় এগারো হাজার। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিশ্বের আরও আটটি দেশের সমভাবাপন্ন জাদুঘরের সঙ্গে মিলে ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব হিস্টরিক মিউজিয়াম অব কনসান্স' গঠন করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি-স্মারক দলিলপত্রের একমাত্র সংগ্রহশালা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে পারে, ভুলে না যায় সেই লক্ষ্যেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে।